চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতাল

দুর্নীতির তদন্ত ব্যাহত করতে মারামারি নাটক!

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম

অনিয়ম দুর্নীতির রেড লিস্টেড  হাসপাতাল চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালে ১৭ মার্চ সোমবার মারামারি ঘটনা ঘটেছে। খুলশী থানা পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

খুলশী থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো. হাফিজুল ইসলাম জানান,পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।মারামারি অভিযোগ নিয়োগপত্র ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী কাজ করা অভিযোগ দুইটি পক্ষ হয়ে একে অপরকে হুমকি গালমন্দ ব্যবহার করে মারামারি জড়িয়ে পড়েন।তবে হাসপাতালের ভিতরের খবর হচ্ছে,১৭ মার্চ সোমবার হাসপাতালটিতে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তে একটি টিম পরিদর্শন করেন। তদন্ত ব্যাহত করতে মারামারি নাটক সাজানোর অভিযোগ হাসপাতালটির বহিষ্কৃত সভাপতি  জাহাঙ্গীর চৌধুরীর।

উল্লেখ্য অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.অং সুই প্রু মারমাকে সভাপতি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা.জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্যসচিব ও চট্টগ্রাম ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি ১৬ মার্চ তদন্ত করার কথা থাকলেও তা ১৭ মার্চ তদন্তে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পক্ষে সর্বশেষ লাইসেন্স ইস্যু করেন মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য),যার মেয়াদ ছিল ৩০ জুন ২০১৪ সাল পর্যন্ত। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছে। ২০১৬ সালে এনালগ পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে ২০১৭ সাল থেকে ডিজিটালাইজড লাইসেন্স পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে লাইসেন্স নেয়নি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল। সরকারি অনুমোদন না থাকলেও ডায়াবেটিস চিকিৎসার পাশাপাশি দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীর জন্যে সিসিইউ, আইসিইউ, এসডিইউ,এইচডিইউ রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকা অনুদান দিতো। দুর্নীতির কারণে গতবছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই অনুদান বন্ধ করে দেয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মু. জসীম উদ্দিন ২০২৩ সালের ১১জুলাই মাসে তদন্ত করে ২৭লাখ ৫০ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে সেই টাকা ১৫দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। টাকা জমা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দিয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এ অবস্থায় আবার নতুন করে হাসপাতাল সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব পান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের পুনঃতদন্তেও সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের অনুকূলে সরকারি অনুদান প্রদান বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত সরকারি তহবিল তছরূপসহ স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি এবং সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ হাসপাতালের অনুকূলে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ থেকে ১৭লাখ ৫০হাজার টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১০ লাখ টাকা জরুরি ভিত্তিতে চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্নেহাশিস দাশ স্বাক্ষরিত ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের এক পরিপত্রে। ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাহাঙ্গীর চৌধুরী সরকারি কোষাগারে সেই সাড়ে ২৭লাখ টাকা জমা দেননি। চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনও জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার অনিয়ম পেয়েছে দুদক।

আরএস