যশোরের অভয়নগরে কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে নিভৃতে ঐতিহাসিক স্মৃতি বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) তৈরি একটি জামে মসজিদ। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ। এর অবস্থান উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামে ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত। সাড়ে ৫০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার তৎকালীন স্থানীয় শাসক হযরত খাজা খানজাহান আলী (রহ.) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
সোমবার (২৪ মার্চ) সকালে উপজেলার শুভরাড়া গ্রামবাসী বলেন, উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে সড়ক ও নদী পথে শুভরাড়া গ্রামে যাওয়া যায়। গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে ভৈরব নদের তীরে এক গম্বুজ ও চার মিনারবিশিষ্ট এই মসজিদটি রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকের শেষদিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) তার অনুসারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে যশোরের বারোবাজার এলাকা হতে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। চলতি পথে তিনি অসংখ্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, দীঘি খনন ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হলে খান জাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে চলে গেলেও ধর্ম প্রচারের জন্য রেখে যান একজন খাদেমকে। তিনি মারা গেলে মসজিদের পশ্চিমে ভৈরব নদের তীরে তাকে সমাহিত করা হয়। যা স্থানীয়দের কাছে জ্বিনের কবর হিসেবে পরিচিত।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্গাকার মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৫ দশমিক ১৩ বর্গমিটার। এর চার কোণায় চারটি অষ্টমকোণাকৃতি টারেট রয়েছে। মসজিদের ভেতরের আয়তন ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি গুণ ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের পরিমাপের এক মিনারের মধ্যবিন্দু থেকে অন্য মিনারের দূরত্ব ২৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে ৩টি দরজা অবস্থিত। পূর্ব দিকে অবস্থিত সদর দরজা খিলান ১১ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত মসজিদে ছোটবড় সব ধরনের ইট রয়েছে।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোর ও খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম ‘খলিফাতাবাদ’ অধ্যায়ে খান জাহান আলী (রহ.) কর্তৃক নির্মিত এই মসজিদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত খান জাহান আলী (রহ.) বারোবাজার হতে ভৈরব নদের কুল ধরে অভয়নগরে শুভরাড়া গ্রামে এসে পৌঁছান। খ্রিষ্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোনো এক সময় তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাশুয়াড়ী গ্রামে মাত্র এক রাতের মধ্যে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে একটি দীঘিও খনন করেন।
খানজাহান আলী মসজিদে ইমাম হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেন, ১৯৬৩ সালের আগে এটি একটি পরিত্যক্ত গম্বুজভাঙ্গা ধ্বংস্বস্তুপ ছিল। পরে এলাকাবাসী এটি কোনোমতে সংস্কার করে নামাজ আদায় শুরু করেন। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে এলে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল কাঠামো ঠিক রেখে বর্তমানে এই মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দুর দূরান্ত থেকে মসজিদের সৌন্দর্য ও জ্বিনের কবর দেখতে আসেন।
বিআরইউ