কেমন আছে শহীদ নাজমুলের পরিবার?

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহীদ নাজমুলের পরিবার, সাহায্য নয়, স্থায়ী কর্মসংস্থান চায়।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত হামিদুল ইসলামের পুত্র নাজমুল হাসান (২৪)।

গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

৪ আগস্ট বিকালে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নাজমুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

১০ আগস্ট নিহত নাজমুলের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই দিনেই পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

চার সদস্যের হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে নাজমুলের পরিবার।

নিহতের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও শোক কাটেনি তার মা, বোন, দাদি। তাদের সকলের চোখ আজও খুঁজে ফেরে নাজমুলকে। চোখের কোণায় ভাসে নিহত নাজমুলের ছবি। প্রতিনিয়ত তারা তাকে খুঁজে ফেরে। লোক দেখলেই করুণ আর্তনাদে দু‍‍`নয়নে বয়ে পড়ে অশ্রুজল।

এবারই প্রথমবারের মতো নাজমুলকে ছাড়া ঈদ পালন করতে হবে পরিবারের সদস্যদের, কিন্তু আনন্দ পরিবর্তে তা বিষাদে রূপ নিয়েছে। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তার মা, বোন, বোন জামাই স্থায়ী কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন।

কান্নাভরা কণ্ঠে নাজমুলের বোন জানায়, "বড় আশা ছিলো ভাইকে নিয়ে এই ঈদে ভাই নেই, ভাবতেই আঁধার ঘনিয়ে আসে। কী করে যে মনকে বুঝাবো, ভাষা খুঁজে পাই না, বুক ফেটে যায়, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।"

রোববার শহীদ নাজমুলের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললে তার বোন জামাই বলেন, "ভাই আশুলিয়া বাইবেল থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। যখন আমি জানতে পারি, তখনই ছুটে যাই। প্রথমে আমার শাশুড়ীকে বিষয়টি না জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। চিকিৎসার অবহেলায় যখন শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, তখনই শাশুড়ী মা’কে জানাই। এর পর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর চিকিৎসায় গতি আসলেও ৯ আগস্ট মারা যায়। বর্তমানে আমি আমার শাশুড়ী ও নানী শাশুড়ীকে দেখাশোনা করছি। ভ্যান চালিয়ে যে টুকু রোজগার করি, তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। ভাইকে যারা যে টুকু সাহায্য করেছে, তা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে ধান চাষ করেছি। যদি ধান ঘরে তুলতে পারি, তাহলে একটু হলেও স্বস্তি ফিরবে। সরকার যদি আমাদের জন্য একটি চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে শাশুড়ীকে নিয়ে ভালোমন্দ খেয়ে বসবাস করতে পারতাম।"

প্রতিবেশীরা জানান, নাজমুলকে হারিয়ে পরিবারটি দিশাহীন হয়ে পড়েছে। তারা ৩ শতাংশ জমির ওপর জরাজীর্ণ ঘরে এখনও বসবাস করছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও সেভাবে সাহায্য আসেনি। তাদের জন্য সরকার যদি স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, তবে পরিবারটি উপকৃত হবে।

ইএইচ