চলন্ত ট্রেনে উঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, দুই বগির সংযোগস্থল বাফারে বসা, ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলে যাতায়াত, রেললাইনের পাশ দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাঁটা, রেললাইনে বসে থাকা, অসতর্কভাবে রেললাইন পার হওয়া, রেলওয়ে ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা — এসব কারণে আখাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
আখাউড়ায় গত ১৫ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন অদূরে রেলব্রিজ এলাকায় আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে দুই তরুণ নিহত হয়। তাদের মধ্যে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার কাইয়ুম (২৩) ঘটনাস্থলেই মারা যান, এবং কসবা উপজেলার তারেক গুরুতর আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে মারা যান। তারা ট্রেনের ছাদে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ ১৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে দুইজন নারী ও এক শিশু রয়েছে। গত বছর (২০২৪) আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ ৩৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, তাদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ, ৯ জন নারী এবং দুজন শিশু ছিল। নিহতদের বেশিরভাগের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ৪৭টি অপমৃত্যু ও দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। আখাউড়া রেলওয়ে থানার আওতাধীন আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-মন্দবাগ এবং আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সেপ্টেম্বর মাসে, যেখানে এক মাসে ৮ জনের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে ১ জন অজ্ঞাতনামা শিশু ছিল। চলতি বছর জানুয়ারিতে এক মাসে ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, এর মধ্যে ১ জন অজ্ঞাত নারী রয়েছে। বাকি ৩ জন পুরুষের মধ্যে ফরিদ মিয়া (৭০) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার গোকর্ন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। অন্যরা অজ্ঞাত পরিচয়।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা (সিআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটাহাঁটি বা লাইনে বসে গল্পগুজবে মশগুল থাকায় অনেকেই ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলপুলিশ যৌথভাবে প্রতি মাসেই সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালায়। এছাড়াও রেলস্টেশন, রেললাইন সংলগ্ন এলাকার মসজিদ ও স্কুলে সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তবে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান, "ট্রেনযাত্রী ও সাধারণ মানুষের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।"
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সুপারিন্টেনডেন্ট মো. নুর নবী বলেন, "প্রতিবছরই ট্রেনে কাটা পড়ে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। স্টেশনের প্লাটফর্মে আগত যাত্রীদের মাইকিং করে নিয়মিত সচেতন করা হয়। যদি যাত্রীরা রেললাইন পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার করে এবং ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকে, তবে এসব দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।"
ইএইচ