আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকেও হত্যা মামলার আসামি আল-আমিন

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে ঢাকার রাজপথে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন মাদারীপুরের আল-আমিন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে পরিবারসহ জড়িত থাকায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রায় অর্ধশত মামলার আসামি হয়েছেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলায় কোনো ঘটনাই ঘটুক না কেন, প্রায় সব মামলায় তার নাম থাকতো। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৯-২০টি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০১০ সাল থেকে তিনি মাদারীপুর ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। গত আট বছর তিনি এক মুহূর্তের জন্যও মাদারীপুরে পা রাখেননি। এরপরও রোমান হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিনের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নিজেও তিনি ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে। অনেক ঘটনায় সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও মামলায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতো। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় অর্ধশত মামলার আসামি হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৩০টি মামলা খারিজ হয়েছে। বর্তমানে ১৯-২০টি মামলা চলমান থাকায় তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর মাদারীপুরে আসতে পারেননি।

তবে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ঘটে রোমান হত্যা মামলায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির পর।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই গুলিতে নিহত হন ভদ্রখোলা গ্রামের গাড়িচালক রোমান। প্রথমদিকে তার বাবা মামলা করতে চাইলেও তাকে বাধা দেওয়া হয়। পরে ২৪ আগস্ট রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

কিন্তু মামলার বিষয়ে কাজল আক্তার জানান, “আমি মামলা করেছি ঠিকই, তবে কাদের আসামি করা হয়েছে তা জানি না। আমাদের মুরব্বি খলিল দর্জি থানায় যেতে বলেছিলেন। আমি আমার বাবাকে নিয়ে থানায় গেলে ওসি শুধু একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন, আমি স্বাক্ষর দিয়েছি।”

তার বাবা বলেন, “আমরা অশিক্ষিত মানুষ, পুলিশ যা বলেছে তাই করেছি। পরে জানতে পারি, আমাদের অনেক পরিচিত এবং নিরপরাধ লোকজনকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।”

খলিল দর্জি স্থানীয় আওয়ামী লীগ রাজনীতির সক্রিয় ব্যক্তি এবং সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। মামলায় আল-আমিনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আল-আমিন বলেন, “আমি ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার। গত ১৪ বছর ধরে যাদের জন্য মাদারীপুরে আসতে পারিনি, তারাই ষড়যন্ত্র করে আমাকে নতুন করে একটি হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি একজন নির্ভীক যোদ্ধা ছিলাম, অথচ এখন সেই আন্দোলনে শহীদ হওয়া রোমানের হত্যার মামলার আসামি আমি! এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?”

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের হয়রানি করা যাবে না। এজাহারভুক্ত আসামি হলেও যদি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইএইচ