বিএনপি সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

ফারুক হোসেন, ফুলছ‌ড়ি (গাইবান্ধা) প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ তুলে ধরে আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকালে ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফজলুপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফজলুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহীদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাদিকুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে বিএনপি পরিবারের বাইরে থাকা এবং বিগত সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনকে অর্থের বিনিময়ে বিএনপির সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি একাধিকবার দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ব্যক্তি উদ্যোগে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলামের দাবি, সম্প্রতি ফজলুপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কয়েকজন আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম নান্নু। এই আবেদনে তিনি নিজের স্বাক্ষরের পাশাপাশি দলীয় সিলমোহরও ব্যবহার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মামলায় যাদের নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে রয়েছেন আমিনুল ইসলাম, যিনি ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন। শাহিন মিয়া, ফজলুপুর ইউনিয়ৃন যুবলীগের বর্তমান সভাপতি, ফরিদুল ইসলাম যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, এনায়েত আলী স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, আবু সাঈদ যিনি ‘কুখ্যাত নৌকা চোর’ হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা। তারা ৫ আসনের সাবেক এমপি মাহমুদ হোসেন রিপনের একনিষ্ঠ কর্মী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

এছাড়া আরও ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা প্রত্যেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করে বলেন, সাদিকুল ইসলাম নান্নু বিএনপির প্রতিপক্ষ সংগঠন যুবলীগের নেতা আব্দুল হাকিমকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং ফজলুপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্যাড ব্যবহার করে তার পক্ষ সমর্থনে প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড- সরাসরি দলের আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ফজলুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিলন, ফুলছড়ি থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন আহমেদ, ফজলুপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, “বিএনপি পরিবারের জন্য এটি চরম লজ্জার বিষয়। আমাদের এত তাড়াতাড়ি এরা ভুলে যাবে জুলুম নির্যাতনের কথা, ভাবতেও পারিনি। একজন উপজেলা বিএনপির সভাপতি কোন ক্ষমতা বলে থানায় নাম সংযুক্তি ও নাম কর্তনের সুপারিশ করে? আমি গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না। দলের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এদিকে, বিএনপির অভ্যন্তরে অনেকেই এ ঘটনাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্ত উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম নান্নুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরএস