শারীরিক প্রতিবন্ধী জয়ন্তী রায় (৪০) অভাব-অনটনের মাঝেও থেমে থাকেননি। নিজের উঠানের গাছতলায় শিশুদের পাঠদানের মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তা আজ সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন তার সেই পাঠশালা চালু রয়েছে টিনশেড ঘরে, মাসিক পাচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা বেতনও।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি গ্রামের এই নারী এসএসসি পাস করেও অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। কৃষক স্বামী হরিচাঁন রায় ও এক ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংগ্রামী জীবন। জীবিকার তাগিদে ২০২৩ সালে স্থানীয় ১০ শিশুকে নিয়ে গাছতলায় শুরু করেন ছোট্ট একটি পাঠশালা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিতেন প্রতিমাসে ৩০০ টাকা করে।
২০২৪ সালের শুরুতে একটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে এসে জয়ন্তীর পাঠশালা দেখে অভিভূত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক। এরপরই পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য অর্থ নেওয়া বন্ধ করতে বলেন তিনি। ইউএনও নিজে তাকে প্রতি মাসে সম্মানী দিতে শুরু করেন।
বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে’ জয়ন্তীর পাঠশালাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন তার পাঠশালায় ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে টিনশেড ঘর, রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও ৩টি ফ্যানও।
জয়ন্তী বলেন, ‘সরকারি স্বীকৃতি ও সহায়তায় আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী নারী আজ আত্মমর্যাদাশীল হয়ে উঠেছি। এই ভালোবাসার ঋণ কখনও শোধ হবে না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হয়েও জয়ন্তীর এমন মানবিক উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এমন জনকল্যাণমূলক উদ্যোগে পাশে থাকবে।’
বিআরইউ