লালমনিরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির (চলতি দায়িত্ব) ইয়াসিন আরাফাতের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং আজ (১৬ এপ্রিল) সকালে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত ৯ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে। অভিযোগে জানা যায়, এক বিচারপ্রার্থী বন্ড দাখিল করতে গেলে নাজির ইয়াসিন আরাফাত তার নিকট থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ভুক্তভোগী ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তিনি বিষয়টি আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালনরত এক স্থানীয় সংবাদকর্মীকে জানান।
পরে ওই সাংবাদিক ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে নাজিরের রুমে গেলে পুনরায় ঘুষ চাওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিক গোপন ক্যামেরায় পুরো ঘটনা ধারণ করেন। ভিডিওটি প্রায় ৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের এবং এতে স্পষ্ট দেখা যায়, নাজির ইয়াসিন ঘুষ দাবি করছেন এবং বলছেন—ঘুষের অর্থের একটি অংশ রুমে থাকা হিসাবরক্ষক গণেশ চন্দ্রকেও দিতে হয়, তাই টাকা কমানো সম্ভব নয়।
রশিদ চাওয়ার বিষয়ে নাজির বলেন, “এসবের কোনো রশিদ হয় না।” টাকা নেওয়ার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে গেলে তিনি প্রথমে টেবিলের নিচে টাকা লুকানোর চেষ্টা করেন এবং পরে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের টাকাগুলো নিয়মিতভাবে নাজির ইয়াসিন আরাফাত ও হিসাবরক্ষক গণেশ চন্দ্র ভাগ করে নেন। তবে গণেশ চন্দ্র এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আজ সকালে নাজির ইয়াসিন আরাফাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক।
এদিকে, একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, ঘুষ না দিলে আদালতের কোনো কাজই সময়মতো এগোয় না।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) লালমনিরহাট শাখার সহ-সভাপতি সুপেন দত্ত বলেন, “এই ধরনের দুর্নীতি বিচার বিভাগের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”
ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশা, কেবল সাময়িক বরখাস্ত নয়, বরং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
ইএইচ