প্রতিদিন ৫৫ হাজার ব্যাটারি রিকশা থেকে উঠছে কোটি টাকার চাঁদা
বিদ্যুৎ অপচয় ও যানজটের পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব
প্রতি রিকশায় চালকের আয় দিনে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা
পুনর্বাসন না করে নিষিদ্ধ করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার কাপাসগোলা হিজলা খালে বেপরোয়া গতির একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা পড়ে ৬ মাস বয়সী এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে এই যানটি। ঘটনাটি নতুন করে সামনে এনেছে চট্টগ্রাম নগরীতে চলমান ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে নানা সমস্যা ও জটিলতা।
নগরীতে চলাচলকারী প্রায় ৫৫ হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে প্রতিদিন উঠছে কোটি টাকার চাঁদা। এ চাঁদার ভাগ বিভিন্ন মহলে পৌঁছালেও কেউ এর দায় নিচ্ছে না।
বিদ্যুৎ অপচয়, যানজট সৃষ্টি, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে—এসব অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
চালকরা বলছেন, প্রতিদিন এই রিকশা থেকে একজন চালক গড়ে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা আয় করেন। তারা বলেন, পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিয়ে রিকশা বন্ধ করা হলে তা হবে তাদের "পেটে লাথি মারা"র শামিল। ফলে তারা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।
৫ আগস্টের পর নগরীতে ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতাকে দুষছেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের রহস্যজনক নীরবতা বিদ্যুৎ অপচয় রোধে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের দায়ও কেউ নিচ্ছে না।
তবে সমস্যার মধ্যেও বাস্তবতা হলো—এই ৫৫ হাজার রিকশা চালকের পেছনে আছে প্রায় তিন লাখ মানুষের জীবিকা। তারা বলছেন, কর্মসংস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া রিকশা বন্ধ করা মানে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া।
অন্যদিকে যাত্রীরাও সময় বাঁচানো ও তুলনামূলক কম ভাড়ার কারণে এই ঝুঁকিপূর্ণ যানটিকে বেছে নিচ্ছেন। সিএনজির চেয়ে ভাড়া কম হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা ব্যাটারি চালিত রিকশায় উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। কম পুঁজি, বেশি আয়ের সুযোগে অনেকে এই পেশায় আসছেন। রিকশার মালিক হওয়ার আশায় অনেকেই দিনরাত কাজ করছেন। অনেকে শারীরিক দুর্বলতা ও নিদ্রাহীন অবস্থায় রিকশা চালাচ্ছেন।
শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষ কর্মহীন হয়ে এই রিকশা চালনায় যুক্ত হচ্ছেন। রিকশা মালিকরা আবার বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে রিকশা ভাড়া দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট কিস্তি পরিশোধ করলেই মালিক হওয়া যায়, ফলে বাড়ছে রিকশার সংখ্যা।
ব্যাটারি রিকশা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ। নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলেই চালকরা সড়ক অবরোধের হুমকি দেন, এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। আর নিয়ন্ত্রণ না করলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
গতকাল শুক্রবার শিশুর মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছেন কর্তৃপক্ষ। সমাধানের পথ খুঁজতে শুরু করেছেন তারা। তবে সমাধান তখনই টেকসই হবে, যখন একদিকে জননিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং অন্যদিকে রিকশা চালকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
ইএইচ