মাগুরা সদরের বাগবাড়িয়া সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী মধুমতী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে রাতদিন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন হলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। এতে নদীতীর, সড়ক, আবাদি জমি, বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মৎস্যসম্পদ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বাগবাড়িয়া সংলগ্ন মধুমতী নদীতে ‘ভাই ভাই আনলোড ড্রেজার ফোর’ নামের একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা ‘এমএমআরবি ব্রিকস’-এর নির্দিষ্ট স্থানে সঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
পরে প্রতিদিন ডাম্প ট্রাকে করে তা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রচণ্ড ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে।
এমএমআরবি ব্রিকসের মালিক লিপ্টন বলেন, "আমরা মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামাতপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদিত একটি চুক্তির অধীনে বালু উত্তোলন করছি। দুর্যোগের কারণে সময় বাড়াতে হয়েছে। তবে আমাদের আরও কয়েকজন পার্টনার রয়েছেন।"
এদিকে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রাসেল বলেন, “চুক্তি সালামাতপুর এলাকার জন্য অনুমোদিত। চুক্তিতে উল্লিখিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। বিষয়টি আইনগতভাবে দেখা হবে।”
মাগুরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহবুবুল হক বলেন, “মাগুরা জেলায় কেবল ঘশিয়াল ঘাটে বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা রয়েছে। অন্য কোথাও ইজারা দেওয়া হয়নি। যদি মাগুরার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের অনুমতি বাতিল করা হবে।”
মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান বলেন, “আমরা এ বিষয়ে তৎপর। অবৈধ বালুমহলে অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে কিছু বন্ধ ও জরিমানা করেছি। নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে আবারও অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
মাগুরা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেওয়ান আসিফ পেলে বলেন, “বাগবাড়িয়া নদীতীরবর্তী ভাটায় অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়েছি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জোরপূর্বক ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে, এতে আবাদি জমি ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইএইচ