ফুলবাড়ী উপজেলার রাস্তার পাশ ও খোলা জায়গায় বসে বই-খাতা হাতে নিয়ে ক্লাস করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। তারা সবাই কিষান-কিষানি। হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে পুষ্টি উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও উদ্যোক্তা তৈরির নানা কৌশল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন “পার্টনার ফিল্ড স্কুল” প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে কৃষি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ফুলবাড়ী কৃষি অফিস।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিলবিহীন এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের আধুনিক পদ্ধতিতে গম, ভুট্টা, ডালসহ নানা ফসলের চাষ, রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা, সার ও পানি ব্যবস্থাপনা এবং উপকারী-অপকারী পোকা চিহ্নিতকরণ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে পাঁচটি কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি স্কুলে ১৩ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীসহ মোট ২৫ জন কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করছেন।
শিক্ষার্থী কৃষক-কৃষাণীরা জানান, এই স্কুলে তারা সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ, সময়মতো সেচ, সঠিকভাবে বালাইনাশক ব্যবহার ও আইপিএম পদ্ধতিতে পোকা দমনের বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করছেন।
ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন ও রিয়াজুল ইসলাম জানান, এই স্কুলের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি ও পুষ্টি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছেন। পাশাপাশি তারা উপকারী ও অপকারী পোকা চিনতেও পারছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “এই স্কুলের মাধ্যমে কৃষকরা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন, উদ্যোক্তা তৈরি এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা পাচ্ছেন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, “পার্টনার প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি ইউনিয়নে পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃষকরা ভবিষ্যতে অন্য কৃষকদের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করবেন।”
এই স্কুল পরিচালনায় উপজেলা কৃষি অফিসার ও এসএপিপিও সহায়তাকারী হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আয়োজনকারীর ভূমিকা পালন করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশা করছে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকরা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন, উদ্যোক্তা তৈরি এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন এবং ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও অবদান রাখবেন।
ইএইচ