চার বছর ধরে নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকায় পাহাড় কেটে তিনটি ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন পাহাড় খেকোরা।
১২৭ ফুট উঁচু পাহাড়ে ২০৩০ মিটার জায়গায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ৯২টি ফ্ল্যাটের বিশাল আবাসন গড়ে তোলার জন্য নির্মাণ চলমান রাখেন।
২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর ইমারত নির্মাণ কমিটির কাছ থেকে তিনটি বেজমেন্ট ও ১৪ তলা (পাহাড়ে বেজমেন্ট হয় না, বাস্তবে তিনটি পার্কিং ফ্লোর ও ১৪ তলা আবাসিক মোট ১৭ তলা) ভবনের অনুমোদন নেন।গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা নোটিশ জারি করেন।কিন্তু ভবন মালিকরা হাইকোর্টে তথ্য গোপন করে রিট করে আদেশ নিয়ে আসেন। তখন রিটে পাহাড় উল্লেখ করা হয়নি, জায়গাটিতে পাহাড় আছে।
রোববার উচ্চ আদালতে জমির মালিকদের করা স্টে অর্ডার খারিজ হয়ে যাওয়ায় সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) তিন তলা পর্যন্ত গড়ে উঠা অবৈধ ভবনটি ভেঙে দিচ্ছেন। তৎকালীন সরকারের সময়ে নির্মাণাধীন ভবনটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারী উঁকি দিলে ধমক আসতো। গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করতেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম দায়িত্ব নেওয়ার পর এইটি তার মাইলফলক সফলতা। এই পাহাড় খেকোদের অর্থের কাছে হেরে যেতো তৎকালীন রক্ষকরা। তবে স্থানীয়দের দাবি পাহাড় অবৈধ গড়ে উঠা ভবনটির মালিকদের কাছে কারা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে তা খুঁজে আইনের আওতায় আনার। উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বে পাহাড়টিতে রঙিন টিন দিয়ে বেশ উঁচু ও বড় বেষ্টনী বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ওপরে বাঁশ দিয়ে ত্রিপল সাঁটানো ছিল। ভেতর চলছিলো পাহাড় কাটার মহাযজ্ঞ। ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার রিমা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতের পাহাড়ি।
তৎকালীন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে একবার ওই আবাসনে অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন কিন্তু কোনো ধরনের জরিমানা করা হয়নি। আর ওই প্রকল্প অনুমোদনের সময় দেওয়া সিডিএর শর্তগুলোর ভঙ্গ করলে প্রকল্প বাতিল না করে বেশ খাতিল তৈরি করেছিলেন।
সংস্থাগুলোর রহস্যজনক ভুমিকায় কাউকে তোয়াক্কা না করে ভবনের কাজ চালিয়ে যান।
জানা গেছে, মূলত পাহাড়টিতে সরকারের রেকর্ডে বাড়ি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এই জমি কয়েকবার হাতবদল হয়ে ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী, খোকন ধর, হিমেল দাশ, সুভাষ নাথ, রনজিৎ কুমার দে, রূপক সেনগুপ্তসহ ৯২ জনের হাতে এসেছে। ১০ কোটি টাকায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কেনা এ জায়গা জামালখান এস এস খালেদ রোডে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের পাহাড় বলে পরিচিত।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম আমার সংবাদকে বলেন, এইটি নগরবাসীর জন্য একটি বার্তা। অবৈধভাবে কেউ স্থাপনা বা ভবন করলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধ ভবনটি গড়ে উঠার সাথে আমার দপ্তরের কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলে বা দায়িত্ব অবহেলার সাথে জড়িত থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, অবৈধ গড়ে উঠা ভবনটি স্বপ্নিল আবাসন নামের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের।
আরএস/ইএইচ