বরিশালে মেলার নামে লটারি বাণিজ্য: চলছে রাতভর অশ্লীল নৃত্য

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম

মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার অনুমতি নিয়ে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর এলাকায় চলছে রমরমা অবৈধ লটারি বাণিজ্য, জুয়ার আসর ও যাত্রাপালার নামে রাতভর অশ্লীল নৃত্য। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

শনিবার দুপুরে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মেলায় কোনো ধরনের জুয়া কিংবা অশ্লীলতা চললে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতার সহায়তায় প্রশাসনের শর্তসাপেক্ষে অনুমতি নিয়ে পহেলা বৈশাখ থেকে মাসব্যাপী "বৈশাখী মেলা"র আয়োজন করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেলা শুরুর প্রথমদিন থেকেই র‍্যাফেল ড্র‍‍`র নামে চলছে লটারি বাণিজ্য, যা মেলার প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভনে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ লটারি কিনছেন। পাশাপাশি মেলার একপাশে চলছে জুয়ার আসর এবং গভীর রাতে যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশিত হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুগঞ্জ থানার ওসি শেখ আমিনুল ইসলাম জানান, মেলার নামে অবৈধ কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতিদিন রাত হলেই মেলার মাঠের একপ্রান্তে একটি টিনের ঘরের স্টলে প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসছে। এরপর রাত ১০টায় শুরু হয় র‍্যাফেল ড্রর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। মঞ্চে সাজানো থাকে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা আকর্ষণীয় পুরস্কার। মাইকে প্রচার করে ২০ টাকা মূল্যে লটারি বিক্রি করছেন যুবকরা, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে অংশ নিচ্ছেন।

র‍্যাফেল ড্র শেষে যাত্রাপালার নামে শুরু হয় অশ্লীল নৃত্য, যা ভোররাত পর্যন্ত চলে। জনপ্রতি দুই থেকে আটশ টাকা পর্যন্ত টিকিট কেটে বিভিন্ন বয়সের মানুষ তা উপভোগ করেন।

পাশ্ববর্তী এলাকার প্রবীণরা বলেছেন, জীবনে অনেক যাত্রাপালা দেখেছেন, কিন্তু এমন নগ্ন নৃত্য কখনও দেখেননি। দ্রুত এই অশ্লীলতা বন্ধ করা না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে বলেও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, মেলায় খুব সতর্কতার সঙ্গে কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে যাতে কেউ মোবাইলে নগ্ন নৃত্যের ভিডিও ধারণ করতে না পারে। এজন্য কয়েকজন পাহারাদার নিয়োজিত আছেন।

মেলা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, "আপনারা তো সব বোঝেন। আমিতো সবাইকে ম্যানেজ করেই মেলা চালাচ্ছি। নিউজ করার দরকার নেই, আপনাদের কিছু লাগলে জানাবেন।"

এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, "মেলার জন্য প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে, তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্ত ভঙ্গ করে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

ইএইচ