ময়মনসিংহ সদরের কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার এডহক কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদ্রাসার আজীবন দাতা সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরিদের দাবি অগ্রাহ্য করে গঠিত এ কমিটির কার্যক্রমে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান লঙ্ঘন করে গঠিত কমিটিতে একটি প্রভাবশালী মহলের অনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের একগুঁয়েমি ও অবহেলা দায়ী বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কাদির বক্স সরকার। বর্তমানে তার প্রপৌত্র আতাউর রহমান প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র জীবিত আজীবন দাতা এবং আইনি প্রতিষ্ঠাতা উত্তরসূরি। ২০২৩ সালের ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি সংক্রান্ত সংবিধি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারদের মধ্য থেকে মনোনীত কেউ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারেন।
কিন্তু সংবিধির এই স্পষ্ট বিধান উপেক্ষা করে, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের প্রস্তাবে শেরপুরের বাসিন্দা খন্দকার মাহবুবুল আলমকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম আপত্তি সত্ত্বেও ওই অবৈধ প্রস্তাব অনুমোদন করে পাঁচ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করেন। অথচ খন্দকার মাহবুবুল আলম প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের কোনো সদস্য নন এবং তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো দানও করেননি।
আজীবন দাতা আতাউর রহমান জানান, একাধিকবার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার বরাবরও অভিযোগ জানানো হয়। এমনকি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন ফি জমা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের একগুঁয়েমি ও প্রভাবশালীদের তদবিরে অবৈধ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করে এবং ২৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালত কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, "আদালতে জবাব দেওয়া হয়েছে। কোর্ট পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।" তবে শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই এডহক কমিটি নিয়ে বিতর্ক অনেক আগে থেকেই চলছিল এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে।
স্থানীয়রা বলছেন, শতবর্ষী একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত হলেও জেলা প্রশাসক নিজেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
ইএইচ