ঈশ্বরগঞ্জে অভাবের তাড়নায় জমি বিক্রি, বাড়ীঘর গুড়িয়ে দখলে নিলো প্রভাবশালী মহল

আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

১৯৭৪ সনের দুর্ভিক্ষের সময়ে অভাবের তাড়নায় জমি বিক্রি করেছিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের বেবস্থান গ্রামের মৃত আবেদ ও জাবেদ আলী। এরপর তৎকালীন সরকার ঋণ শালিসী বোর্ড গঠন করলে সেখানে মামলা করে জমি ফেরত পান তারা। এরপর থেকেই ওই জমিতে ঘরবাড়ী নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসছিল মৃত আবেদ ও জাবেদ আলীর উত্তারাধিকারীরা।  

কিন্তু গত ১৯ এপ্রিল (শনিবার) হঠাৎ র্দীঘ সময় পর ওই জমিতে ভেকু মেশিন চালিয়ে মৃত জাবেদ আলীর ছেলে মো: ইদ্রিস আলীসহ তাঁর ভাতিজা রুবেল ও আলমের বাড়ীঘর গুড়িয়ে দিয়ে দখল নিয়েছেন মো: তানহার আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঈশ্বরগঞ্জের স্থানীয় রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ।      

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।      

ভুক্তভোগীরা জানান, ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে পড়ে অভাবের তাড়নায় ৩৮ শতক জমি প্রতিবেশি হযরত আলী ও মিয়া হোসেনদের কাছে বিক্রি করে মৃত আবেদ ও জাবেদ আলী। এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৯৭৪  সালের চলা  দুর্ভিক্ষের বিষয়টি চিন্তা করে তৎকালীন সরকার ঋণ শালিসী বোর্ড গঠন করে অভাবের তাড়নায় বিক্রি জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ঋণ শালিসী বোর্ড আদালতে মামলা করে বিক্রিত জমি ফেরত চাইলে ডিগ্রী পায় ভুক্তভোগী মৃত আবেদ ও জাবেদ আলী। এতে অসন্তোষ বিবাদীপক্ষ দুই দফা আপীল করে মামলায় হেরে গেলে বিগত ২২ বছর ধরে ওই জমিতে ঘরবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন মৃত আবেদ আলী ও জাবেদ আলীর উত্তরাধিকারীরা।  

কিন্তু বিগত ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ওই জমি দখলে নিতে উঠেপড়ে লাগেন স্থানীয় হযরত আলীর ছেলে জামায়াত নেতা মো: তানহার আলী। এরপর তিনি এলাকায় প্রভাববিস্তার করে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ওই জমিতে ভেকু মেশির চালিয়ে প্রায় শতাধিক গাছ উপড়ে ফেলে দিয়ে ৩টি পরিবারের প্রায় ৮টি ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেন। বর্তমানে ঘরবাড়ী ছেড়ে অসহায় দিনযাপন করছেন ভুক্তভোগীসহ তার স্বজনরা।  

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ  মো: তানহার আলী বলেন, ৭৪ সনে জমিটি কিনেছিল আমার বাবা। কিন্তু ৯০ সালে দুর্ভিক্ষ পীড়িত ও নদ ভাঙ্গন এলাকা দেখিয়ে প্রতিপক্ষরা ঋণ শালিসী আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। তখন আমার বাবার সামর্থ্য না থাকায় তিনি মামলাটি পরিচালনা করতে না পারায় বাদীরা প্রতারণা করে ডিগ্রী পায়। কিন্তু এই জমির বিআরএস এবং খাজনা-খারিজ সব আমাদের নামে। তাই আমি আমার জমি উদ্ধার করে দখল নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিষয়টি বিষয়টি অবগত। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানে। আপনি (প্রতিবেদক) এক সময় আমার সঙ্গে দেখা করলে ঘটনাটি বুঝিয়ে বলব।  

এবিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: ইকবাল হোসাইন বলেন, উভয় পক্ষের কাগজপত্র আমি দেখেছি। এতে বি আর এস  রেকর্ড  ও খাজনা-খারিজ মূলে এই জমির মালিকানা তানহারদের। তবে প্রতিপক্ষের ইদ্রিস আলী আমাকে ঋণ শালিসী বোর্ডের কিছু ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন। কিন্তু এসব ডকুমেন্ট দিয়ে জমির মালিকানা তিনি দাবি করতে পারেন না। মালিকানা দাবি করতে হলে উনাকে বিআরএস সংশোধনের মামলা করে ডিগ্রী পেতে হবে। তবে জমি দখল নেওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। এনিয়ে আইনগতভাবে আমার কিছু করারও নেই।

আরএস