বাণিজ্য ঘাটতি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ইউএস ডলারের তীব্র হাহাকার চলছে। লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাটির দাম। বিপরীতে কমছে দেশীয় মুদ্রা টাকা। তাই বাজার স্থিতিশীল করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ২০ দিনে (১ থেকে ২০ জুলাই) ৭৩৮ মিলিয়ন বা ৭৩.৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা)। এর ফলে দুই বছর পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯৪ টাকা ৪৫ টাকায় ডলার বিক্রি করলেও খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে আরও চড়া দামে। গত সপ্তাহের শেষে খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৯৮ টাকা। সপ্তাহের শুরুতে তা ছিল একশ’ টাকার উপরে। সপ্তাহের শেষের দিকে গতকাল তা ১০২ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত উঠে যায়।
গত বুধবার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি হলেও একদিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৫০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে টাকা-ডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা। আর এটাই আজকের আন্তঃব্যাংক দর।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত চার দিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচ টাকা। খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। তাতে অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
ফলে বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। তাই আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০১ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় পাচ্ছে না।