বৈধ পথে ডলারমূল্যে বড় ব্যবধান

ভাটা পড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহে

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ০৬:৪১ পিএম
  • আগস্টে আসল ১৯৩৮০ কোটি টাকা, জুলাইয়ের তুলনায় কমেছে ৫০০ কোটি টাকা
  • ব্যাংক-খোলাবাজার ব্যবধান ১০ টাকা
  • ব্যবধান কমানো না গেলে বাড়বে হুন্ডি- বিশ্লেষকদের মত

খোলাবাজারের সাথে ডলারের দামে বড় ব্যবধানের মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন ছাড় ও সুবিধা দেওয়ার ফলে এ ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। 

জুলাইয়ের পর আগস্টেও ব্যাংকিং চ্যানেলে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে প্রায় ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার বা ১৯ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) পাঠিয়েছেন তারা। এ পরিমাণ আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে কিছুটা কম। 

তবে গত বছরের আগস্টের চেয়ে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত বছরের আগস্টে ১৮১ কোটি ডলার এসেছিল। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এসেছিল ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। 

এই বছরের একই সময়ে এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের রেট ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি ব্যবধান থাকে। তখন বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। এখন এক ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংক ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা দিচ্ছে। সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। 

সব মিলিয়ে ১০০ টাকার মতো পাওয়া যায়। কিন্তু খোলা বাজারে ডলার ১১০ থেকে ১১১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর মানে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স এলে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম। 

যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ব্যবধান কমানো যায় তাহলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আরও বেশি আসবে। তাই যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারের ডলারের রেটের ব্যবধান কমানোর পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের দামে খোলাবাজারের চেয়ে ব্যবধান থাকার পরও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। আমরা আশাকরি প্রবাসী ভাই-বোনেরা বছরের বাকি সময়জুড়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবেন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৪ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

বিদেশি ব্যাংকগুলোতে এসেছে ৭৫ লাখ ডলার। দুইটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে এসেছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৪৩ কোটি ডলার। এরপর সিটি ব্যাংকে ১৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংক ১১ কোটি ৪০ লাখ, ডাচ–বাংলা ব্যাংকে ১০ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি  ডলার। 

তবে এ সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। 

২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।

অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিক কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। 

অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। 

তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা পর্যন্ত, নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়।

 

টিএইচ