জরুরী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে ঈদ উপলক্ষ্যে বেশ কিছু পণ্যের এলসি খুলতে রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চেয়েছে ব্যবসায়ীরা। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সভা শেষে এ কথা জানায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি সহজ করে সার্কুলার করেছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরেও অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলো পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে আমদানি হয়। বলা যায়, বছরের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসা রমজান কেন্দ্রীক। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছি রিজার্ভ থেকে সহায়তা দিয়ে হলেও যেন এলসি স্থিতিশীল করা হয়।’
এ ছাড়া আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে (জুন ২০২৩) ঋণ পরিশোধ না করলেও যাতে ব্যাংক খেলাপি না করে। তাদের মতে, করোনা মহামারির ক্ষতি খাটিয়ে উঠলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি।
জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। এলসি খুলতে পারছেন না অনেকে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে নতুন বিধিনিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা জানিয়েছি।
ইডিএফ ঋণ সুবিধা বাড়ানোর দাবি করে তিনি বলেন, ইডিএফ যেটা ১৮০ দিন মেয়াদ আছে সেটা বাড়িয়ে ২৭০ দিন করার কথা বলেছি। আমরা গ্যাস-জ্বালানী সমস্যায় আছি, কারখানা চালাতে পারছি না। কারখানা চালাতে না পারলে শ্রমিকের বেতন দিতে পারবো না। যেখানে আমি এলসি সমস্যায় পড়ে কাঁচামাল আমাানি করতে পারছি না সেখানে ঋণ পরিশোধ কিভাবে করবো।
আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের অভিন্ন দরের কথ বলে তিনি জানান, আমাদের আমদানিতে ডলারের দাম ১০৫ টাকা পড়ছে। সেখানেও রপ্তানিতে ১০১ টাকা। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের অভিন্ন দরের কথা বলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের যৌক্তিক দাবিকে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। সুদহারের ক্যাপ তুলে নেওয়ার বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সুদহার কম হলে বিনিয়োগ বাড়ে। আমরা মনে করে আগামী এক বছর সুদহারের ক্যাপ না তোলার দাবি জানাই।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, করোনার মতো নীতি সহায়তা চেয়েছে ব্যবসায়ীরা। রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার কারনে এটা চেয়েছে, এটা নিয়মিত লোনের জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতির স্বার্থে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বিষয়টি। এলসি খোলায় যাতে সমস্যা না হয় এজন্য ৮ পণ্যের বিষয়ে সার্কুলার হয়েছে, প্রয়োজনে বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ডলার সরবরাহের কথা যেটা বলা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। আগামীতে ঈদ আছে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। তখন দেখা যাবে ব্যাংকগুলো নিজেরাই এলসি খুলছে এবং তারা সেটেলমেন্ট (নিষ্পত্তি) করছে। আমদানি-রপ্তানিতে ডলারের এক দরপর কথা বলা হয়েছে। আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে সে দিকেই যাচ্ছি। তবে এটা সমান করা সম্ভব নয়। আমরা ২ শতাংশ ব্যবধান রাখার পক্ষে। আর সুদহারের ক্যাপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ক্যাপ তুলে নিলেতো সার্কুলার হবে।
ইএফ