করোনাকালের মতোই গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা (৫০ শতাংশ) ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করলে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন না সংশ্লিষ্ট গ্রাহক।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ‘ঋণ শ্রেণীকরণ’ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারটি সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সময়কে করোনার চেয়েও খারাপ উল্লেখ করে বিশেষ সুবিধার আবেদন করে এফসিসিআই। গত ১২ ডিসেম্বর গভর্নরের সাথে বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনটির সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনকার অবস্থা করোনার চেয়ে ভাল নয়; বরং খারাপ। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই, গ্যাসের চাপ কম, পর্যাপ্ত কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে না, অর্ডার কমে যাচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মীদের বেতন দিতেই কষ্ট হচ্ছে। ব্যাংকের কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবো। তাই আমরা আবেদন করেছি ডিসেম্বরের কিস্থ পরিশোধে যেন জুন পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়।’ তাদের এমন দাবির সপ্তাহ না পেরোতেই বিশেষ ছাড় দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্যদিকে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে আবারও বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে মত দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মাস্টার সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষমতা ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঢালাও এ ছাড় পেয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো ঋণ খেলাপি ঋণ নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট নিয়ে নবায়ন করা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের ঋণ। তাতেও খেলাপি ঋণের পরিামণ কমানো সম্ভব না হওয়ায় অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচকটি কাগজে কলমে হলেও ধরে রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এর আগে নির্দেশনা ছিল অশ্রেণিকৃত মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ত্রৈমাসিকের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণ বিরূপমাণে শ্রেণিকরণ করা যাবে না।
কিন্তু বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ায় এর দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাÐ গতিশীল রাখা এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজ করতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের অক্টোবর হতে ডিসেম্বর সময়কাল পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তিসমূহের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ চলতি ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলো বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না।
সার্কুলারের মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়াদি ঋণসমূহের ২০২২ সালের এপ্রিল হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তি বা কিস্তিগুলোর অপরিশোধিত অংশ বিদ্যমান ঋণের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সমকিস্তিতে (মাসিক ও ত্রৈমাসিক) প্রদেয় হবে। তবে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশিষ্ট মেয়াদকালের সঙ্গে বর্ধিত ১ বছর সময়কে বিবেচনায় নিয়ে কিস্তি পুনর্র্নিধারণপূর্বক নতুন সূচি অনুযায়ী আদায় করা যাবে। এছাড়া আগের সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জারি করা এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবৎকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এবি