ফুলের চারা বেচে লাখপতি

নয়ন দাস, গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৩, ০২:২০ পিএম

মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসি পাশ করেছেন ইমরান আহাম্মেদ। এই শিক্ষার্থী নবম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই সারাদেশে অনলাইনে বিক্রি করেছে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ধরণের ফুলের চারা। 

একতলা বাড়ির ছাদে চাষ করা এসব ফুলের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকার বাণিজ্য করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য বিভাগের এই শিক্ষার্থী। ইমরান আহাম্মেদের দাবি তার সংগ্রহে ফরমোসা ব্লাক পায়েল নামের কালো জবাসহ বিদেশী কয়েক প্রকার ফুলের চারার সংগ্রহ রয়েছে, যা দেশে আর কারও কাছে নেই।

সম্প্রতি শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শাবনুর মার্কেট এলাকায় ইমরানের ছাদ বাগানে দেখা যায় দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় এক হাজার পাঁচশত প্রকার ফুলের চারা। এসব চারার অধিকাংশ ইমরান আহাম্মেদ ভারত থেকে সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে আমার সংবাদের প্রতিবেদককে।

শরীয়তপুরের মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও প্রবাসী আবুল বাসার কাজী-শিউলী আক্তার দম্পত্তির একমাত্র ছেলে ইমরান আহাম্মেদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জবা ফুলের প্রজেক্ট করা। এছাড়াও জবা ফুল ব্যতিত এডেনিয়াম ও বাগান বিলাসের আরও দুইটি প্রজেক্ট খুব শিগগিরই গড়ে তুলবে সে।

উদ্যোক্তা ইমরান আহাম্মেদ বলে, সবার মত ছোটবেলা থেকে ফুল আমার ভীষণ প্রিয়। যখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করি তখন প্রথমে একটি বেলী ফুলের চারা রোপন করি। ওই চারা বড় হয়ে যখন ফুল ফুটেছিল তখন অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম। বেলী ফুল ফোটার আনন্দ আমাকে আরও বেশি উৎসাহিত করে ফুলের চারা রোপন করতে। এরপর ফুলের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির উঠোনসহ যেখানে একটু খালি জায়গা পেতাম সেখানেই ফুলের চারা রোপন করতাম। বন্ধুদের থেকে হঠাৎ একদিন খবর পাই উপজেলা চত্ত্বরে বৃক্ষ মেলা হচ্ছে। মেলায় গিয়ে অনেক গুলো ফুলের চারা সংগ্রহ করেছিলাম। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় একদিন ফেসবুকে দেখতে পেলাম ফুলের চারা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো যেসব চারা অনলাইনে বিক্রি হয় তার অধিকাংশই তখন আমার সংগ্রহে ছিল। ভাবলাম চাইলে এই চারা বিক্রি করেই তো আমার হাতখরচ হয়ে যায়।

ক্ষুদে উদ্যোক্তা এই শিক্ষার্থী আরও বলে, হাত খরচ যোগানোর জন্য ‘আল ইমরান নার্সারী শরীয়তপুর’ নামে তখন একটি ফেসবুক পেজ তৈরী করে চারা বিক্রি করা শুরু করলাম। চারা বিক্রি থেকে আমার অনেক টাকা আয় হয় ওই সময়। এছাড়াও আমি গ্রাফটিং করে চারা উৎপাদন করি। গ্রাফটিং থেকে চারা উৎপাদন হতে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ মাস। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় লক্ষ্য করলাম বাংলাদেশে জবা ফুলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো অস্ট্রেলিয়ান, আমেরিকান, ব্যাঙ্গালেরু, ট্রপিক্যালসহ অন্যান্য জবা ফুল। কিন্তু দেশে তখন এসব ফুলের চারা পাওয়া যেত না। দেশে জবার চাহিদা বেশি থাকায় আমি আমার পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে ভারতের কলকাতা থেকে জবার বিদেশী এসব প্রজাতির খয়েরী, হলুদ, লাল, কালো, গোলাপীসহ প্রায় তিন শতাধিক রঙের জবার চারা সংগ্রহ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিজে পরিচর্যা করে চারা উৎপাদন করে দেশের ৬৪ জেলায়ই এসব চারা বিক্রি করেছি দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়।

ইমরান আহাম্মেদ আরও বলে, ফুলের চারা রোপন করতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি হলে মা রাগারাগি করতেন। কিন্তু আমি অবসর সময়কে বাজে কাজে না ব্যয় করে পড়ার ফাঁকে এসব চারা উৎপাদন করে যখন আয় করা শুরু করি, তখন আর মা কিছু বলতেন না। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রতি মাসে জবা ফুলের চারা পঞ্চাশ থেকে আশি হাজার টাকা বিক্রি হত। এসএসসি পরীক্ষা শেষে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা বিক্রি হতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতা এখনও রয়েছে। দিন দিন চাহিদা আরও বাড়ছে। বিশেষ করে জবা ফুলের চাহিদা, ফুল ফোটার আগেই সারাদেশের মানুষ অর্ডার করে কিনে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রকার জবা ফুলের চারার সংগ্রহ রয়েছে আমার কাছে। এছাড়াও বাগান বিলাস, এডেনিয়ামসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বিদেশী ফুলের চারার সংগ্রহশালা রয়েছে আমার কাছে। চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ফুলের চারা সংগ্রহ করে দিতে পারব আমি।

গুণে মানে ভালো চারা দিয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশের ফুল প্রিয়দের আস্থা অর্জনকারী এই শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা নাসার্রীতে বিদেশী ফুলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান, আমেরিকান, ব্যাঙ্গালেরু, ট্রপিক্যাল জবা ফুলের চারার মূল্য একশত সত্তর টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ছয়শত টাকা। বাগান বিলাসের মূল্য একশত পঞ্চাশ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। এডেনিয়ামের মূল্য তিনশত থেকে পাঁচশত টাকা। এছাড়াও তার নার্সারীর দেশীয় প্রজাতির ফুলের চারার মূল্য পঞ্চাশ থেকে তিনশত টাকা। অনলাইনে জবা ফুলের যে রঙ দেখা যায়, তা পুরোপুরি বাস্তবিক হওয়ায় সূলভ মূল্যে ‘আল ইমরান নার্সারী শরীয়তপুর’ থেকে অনলাইনে যোগাযোগ করে সারাদেশের মানুষ নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন জবাসহ অন্যান্য ফুল।

ছোট্ট বয়সে ফুলের চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করার কারণে ইমরান আহাম্মেদকে নিয়ে গর্ব করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ইমরান আহাম্মেদের খালামণি সেতারা বেগম বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে অবসর সময় ইমরান ফুলের চারা উৎপাদনে ব্যয় করে বলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। ইমরান তার অবসর সময় বন্ধুদের সাথে অপচয় না করে ফুলের চারা বিক্রি করে টাকা আয় করে। আয়ের এই টাকা ফুলের নতুন নতুন প্রজাতি সংগ্রহ করার জন্য ব্যয় করে সে। ফুল সুন্দর, ইমরান যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ ফুলের মতই সুন্দর হবে ওর ভবিষ্যত।

শরীয়তপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর বেপারী বলেন, সদ্য মাধ্যমিক পাস করা একটি ছেলে ফুলের চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করে, এটা আশ্চর্য বিষয়। কেউ যদি ভালো কাজে সময় ব্যয় করে তাহলে সাফল্য আসবেই। দেশের শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে ছোট্ট ইমরান। আমি ইমরানের সাফল্য কামনা করছি।

এআরএস