কিশোরগঞ্জে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে হতদরিদ্ররা তো বটেই মধ্যবিত্ত মানুষও পড়েছে বিপদে। চাহিদার অর্ধেকও তরিতরকারি তারা কিনতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দিচ্ছেন মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই। আড়তদাররা বলছেন আমদানি না থাকায় বেড়েছে দাম।
কিশোরগঞ্জে বাজার ঘুরে দেখা গেছে,কপি প্রতিকেজি ৮০ টাকা, আলু ৫০ টাকা, বেগুন ৮০, পটোল ৬০, করলা ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৬০, ঝিঙে ৬০, পেঁপে ৩০, ধুন্দল ৫০, বাঁধাকপি ৬০, ফুলকপি ১২০, মরিচ ১৮০, বরবটি ১০০, মিষ্টিকুমড়া ৫০, পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৮০ থেকে একশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রুবেল নামে পেশায় রিকশাচালক জানান, চারজনের সংসার তাঁর। দিনে গড়ে চারশ/পাচশ টাকা আয় করেন। দিনে যা আয় করেন তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কেনার পর আর সবজি কিনতে পারেন না। এক কেজি আলু ৫০ টাকা। বেগুন ৮০ টাকা। এভাবে চলা সম্ভব না। খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আক্ষেপ করে বলেন, মাছ-মাংস কতদিন খান না তা মনে নেই।
অপর এক রিকশা চালক নজরুল সংসার কীভাবে চলছে জানতে চাইলে কেঁদে ফেলেন। বলেন, দিনে ৪/৫ শ টাকা আয় করেন। পাঁচজনের সংসার কীভাবে চালাবেন। তরিতরকারির যে দাম, কাছে যাওয়া যায় না। চাল, ডাল, মসলা তো পড়েই রইল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তিনি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। তাঁর আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বাজারের খুচরা তরকারি বিক্রেতা সুমন জানান, মাঝখানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে আমদানি গেছে কমে। এরই প্রভাবে বেড়েছে দাম। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাম স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। দাম বাড়ার কারণে তাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। যার যতটুকু দরকার তারচেয়ে অনেক কম নিচ্ছে। আধা কেজি করে দুই রকম তরকারি কিনতেই লাগছে একশ টাকা।
গ্রামাঞ্চল থেকে সব সবজি বাজারে আসে। কয়েকদিন ধরে সরবরাহ নেই। তাই দাম অনেক বেশি। এখানে তাদের করণীয় কিছু নেই। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে অল্প লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।
আলুর আড়তদার এনামুল জানান, তারা আলু কিনে থাকেন। বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আলুর ওপর চাপ পড়েছে। যে কারণে বেড়েছে আলুর দাম। বর্তমানে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারি বিক্রি করছেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণের সুযোগ নেই। দু-একটি অত্যাবশকীয় পণ্য সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা জানান,বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। সার, ডিজেল, কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছেন।
এআরএস