নতুন বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোকে (ইপিজেড) ঘিরে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে সরকার। তাই পটুয়াখালি, গাইবান্ধা ও যশোরের নতুন তিনটি ইপিজেডে আমদানি-রপ্তানির নিয়মে ক্ষেত্রে নমনীয়তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারিদের কাস্টমস্ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা নিরসন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০০৮ এর আওতামুক্ত রাখা, কাস্টমস্ কর্তৃক জারিকৃত স্থায়ী আদেশসমূহ বাতিল এবং প্রস্তাবিত কাস্টমস্ (ইপিজেড) বিধিমালা, ২০২১ চূড়ান্তকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইউটিলাইজেশন পারমশিনও দাখিল করতে হবে না।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) গত ১৭ অক্টোবর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়েছে।
এসব ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে “বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮” এর আওতামুক্ত রাখা এবং কাস্টমস বন্ড কশিশনারেটসমূহ কর্তৃক ২০১৪ সালে এবং পরবর্তীতে বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন, আমদানি প্রাপ্যতা, সহগ নির্ধারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করে জারিকৃত স্থায়ী আদেশসমূহ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে।
এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইউটিলাইজেশন পারমশিন (ইউপি) বা ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) দাখিলের প্রয়োজন হবে না। আমদানি, রপ্তানিসহ সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কাস্টম হাউস বা বন্ড কমিশনারেটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বেপজার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ইপিজেডস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বন্ড রেজিস্ট্রেশন এবং পরবর্তীতে স্থায়ী বন্ড রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এছাড়া, বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, বিনিয়োগের বহুমূখী ইতিবাচক দিক এবং জাতীয় রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় এনে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কান্টমস, বেপজা এবং বিনিয়োগকারিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভার মাধ্যমে ইপিজেডের কাস্টমস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম সহজ করা হয়। সে মোতাবেক ইপিজেডস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এতে বলা হয়, পরবর্তীতে বেপজা এবং ইপিজেডস্থ বিনিয়োগকারিদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ২০০৮ সালে এনবিআর কর্তৃক জারিকৃত বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০০৮-তে ইপিজেডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে ইপিজেডের জন্য বর্তমান বলবৎ থাকা ১৯৮৪ সালরে রুল এবং সময় সময় সহজিকৃত কাস্টমস পলিসির সাথে সাংঘর্ষিক যেমন: বন্ড রেজিস্ট্রেশনের পরিবর্তে বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন, আমদানি প্রাপ্যতা, সহগ নির্ধারণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে অসঙ্গতি ও জটিলতা দেখা দেয়। এসব কারণে ইপিজেডস্থ বিনিয়োগকারিরা বন্ড রেজিস্ট্রেশন, আমদানি, রপ্তানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তাদের স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
বেপজা`র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক ইপিজেডসমূহকে জাতীয় আমদানি এবং রপ্তানি নীতি আদেশের আওতামুক্ত রাখা সত্ত্বেও সম্প্রতি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কশিশনারেট, রংপুর কর্তৃক ইপিজেডস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউটিলাইজেশন পারমশিন (ইউপি) বা ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ফলে উত্তরা ও ঈশ্বরদি ইপিজেডস্থ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গত ২ মাস ধরে স্থবির হয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে ইপিজেডের বিনিয়োগকারিরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। যা ইপিজেডে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের চলমান প্রবাহের উপর মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
বেপজা বলছে, কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে দেশের প্রায় ৫ লাখের বেশি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ জাতীয় রপ্তানিতে প্রায় ১৭ শতাংশ অবদান রেখে আসছে।
এক্ষেত্রে ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানির এই চলমানপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এইচআর