সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও ঝাঁজ কমেনি পেঁয়াজের, চড়া মাছ-গোস্তের বাজার

মো. ইমরান খাঁন প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম

গত দুই দিন ধরে সারা দেশে হালকা মাত্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। আজও (শুক্রবার) সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় আজ কাঁচাবাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে। শীতের শেষে সবজির দাম বাড়ন্ত হলেও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে, আগের মতোই চড়া দাম দেখা গেছে মাছের বাজারে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুর দেখা যায়, মটরশুঁটি ৮০-৯০টাকা, গোলআলু ৩০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০টাকা, গোল বেগুন ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা (বড়)-১৬০ টাকা, করলা (ছোট)-১২০-১৪০ কাঁচা পেঁপে ৪০-৫০টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৫০টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০-১১০ টাকা এবং শিম ৩০-৪০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও লাউ আকারভেদে ৫০-৬০ টাকা এবং ফুলকপি-পাতাকপি প্রতি পিস ৩০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন। বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২২০ এবং দেশীয় রসুন ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চিনি ব্যবসায়ী বশার মিয়া বলেন, গতকাল যে চিনির দাম ওঠা-নামা করেছে তাতে বাজারে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। আমরা ১৪৫ টাকা করে চিনি বিক্রি করছি। তবে প্রথম দিকে ১৫০ টাকা করে দাম চেয়ে ১৪৫ করে দিয়ে দিচ্ছি। কেউ বেশি নিলে ১৪০ টাকায়ও দিচ্ছি।

বাজার করতে আসা আলী আহাদ বলেন, সব জিনিসের যে দাম...তেল-চিনি-পেঁয়াজ কিছুই তো নাগালের মধ্যে নেই। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৩০ টাকা।  মানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকার মতো। এভাবে কীভাবে মানুষ ভালো থাকবে? আমাদের শুধু মেনে নিতে হচ্ছে। ১৩০ টাকার পেঁয়াজকেই এখন সহনশীল করে নিতে হচ্ছে। তেল-চিনিরও একই অবস্থা।

সবজি বিক্রেতা সোহরাব হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আজ প্রতিটি সবজিই ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমেছে। গত সপ্তাহে দাম কিছুটা চড়া ছিল। আজ পাইকারি আড়তেই কম দামে সবকিছু কিনতে পরেছি। তাই কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, মূলত গতকাল রাতে বৃষ্টির কারণে মোকামে কম মানুষ হয়েছে। যার কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চড়া দাম হাঁকাতে পারেনি। আশা করি এই পুরো সপ্তাহ জুড়ে দাম স্বাভাবিক যাবে।

এদিকে সালাউদ্দিন আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা যেভাবে বলছেন সবজির দাম ১০-১৫ টাকা করে কমেছে আদতে তা ঠিক নয়। কয়েকটা সবজির ক্ষেত্রে ৫-৭ টাকা কম আছে গত সপ্তাহের তুলনায়।

অন্যদিকে নিউমার্কেটের বনলতা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, ছোট কাতলা মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় কাতলা মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা, বড় পাঙাশ মাছ ২৮০-৩০০ টাকা, আকার ভেদে ইলিশ মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, সিলভারকার্ব মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ফালি মাছ ৪৫০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ টাকা, বড় কৈ মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৮৫০ টাকা কেজি দরে দাম চাওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও ছোট মাছের মধ্যে চিংড়ি ৩০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রইসুল ইসলাম নামের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ঢাকা শহরে বাজার ভেদে বিভিন্ন জায়গায় একেক রকম দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে সবমিলিয়ে দামের পার্থক্য মোটামুটি কাছাকাছিই থাকে। মাছের দাম গত সপ্তাহে যেমন ছিল এবারও তেমনই আছে। খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।

কিন্তু জহিরুল ইসলাম রাসেল নামে এক ক্রেতার দাবি, সব ধরনের মাছে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। কিছু কিছু মাছে সেটা আরও বেশি বেড়েছে।

এদিকে, গরুর মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে। নির্বাচনের আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকাতে নামলেও পরে তা ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। গত এক সপ্তাহে দাম আরও বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজিতে।

বাড়তি দামের বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, রোজা-কোরবানিকে সামনে রেখে খামারিরা গরু বিক্রি কমিয়েছে। সে জন্য বাজারে সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়ছে।

চড়া দামে আটকে আছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বড় বাজারে। আর পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এইচআর