দামের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল ক্রেতারা

আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার, ঢাকা প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪, ০৮:১০ পিএম

নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ক্রেতারা বাজারে গিয়েও কিনতে পারছে না চড়া দামের কারণে।

কিছুদিন আগেও বেগুন ছিল ৫০-৬০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। একই সময়ে শসার দাম ৪০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০-১২০ টাকা, লেবুর হালি ২০-২৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। আলুর দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। শসার মতো ১০০ ছুঁয়েছে বরবটি ও পটলের দামও।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে অন্যান্য ধরনের সবজির দাম বাড়তিই রয়ে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকালে বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি খুব বেশি নেই। বাজারে সবজির দোকানগুলোতে সবজির চড়া দামই চলছে। শসা প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও অন্যান্য সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে চললেও বরবটি, পটলের দাম বাড়তি হয়ে ১০০ টাকা ছুঁয়েছে।

এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। গাজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ভালো মানের লেবু রমজানের প্রথম দিন ৮০ টাকা হালি বিক্রি হলে আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি।

পাশাপাশি বাজারে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, রমজানের আগে যে করলা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটির দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বাঁধা কপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০, শিম প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী আমার সংবাদকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজান মাসে সব কিছুর দাম কমিয়ে দেওয়া হলেও, আমাদের দেশে ঘটে উল্টোটা। সবজির দাম বেড়ে যায়। সেই জিনিস বেশি কেনে মানুষ, সেটার দামই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের মত সাধারণ মানুষ শসা কীভাবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে কিনবো? এ ছাড়া লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি, পটল, বরবটির দামও প্রতি কেজি ১০০ টাকার ওপরে।

সবজির সার্বিক দাম নিয়ে গুলশান-সংলগ্ন লেকপাড় বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, দুই একটি সবজির দাম রমজানে বেড়েছে, বাকিগুলোর দাম আগের মতোই আছে, তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু দাম বেশি। আজকের বাজারে শসা, বরবটি, পটল প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাকিগুলোর দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। বাজারে বিভিন্ন সবজি নতুন করে উঠছে। এগুলোর সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে সেগুলোর দাম কমে আসবে। আর যেই সবজিগুলোর দাম ১০০ বা তার চেয়ে বেশি চলছে এগুলো এখন সিজন শেষের সবজি, নতুন করে ক্ষেত থেকে উঠতে শুরু করলে দাম কমে যাবে। এ ছাড়া রমজানের বাজারের হিসেব করলে আজকের বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা। তবে অন্যান্যবার রমজান মাসে যেভাবে বেগুনের বাড়তি থাকে সেই তুলনায় এবার তুলনামূলক বেগুনের দাম কম।

ক্রেতারা বলছেন, মুরগির দাম কমলেও তারা স্বস্তিতে নেই। কারণ কম ওজনের মুরগি বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। কিনতে গেলে বড় মুরগি কিনতে হচ্ছে। ফলে প্রয়োজন না থাকার পরও অনেককে বেশি ওজনের মুরগি কিনতে হচ্ছে। ওজন বেশি হলে দামও বেশি আসে। আর কম ওজনের মুরগি পাওয়া গেলেও স্বাভাবিকের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি।

দেখা গেছে, ২০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে ২২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, সোনালি ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩৪০ টাকা দরে। সোনালি হাইব্রিড ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ২৯৫ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ৫০-১ হাজার ১০০ টাকা। 

৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মাগুর ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকায়, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার টাকা, মেনি ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বেলে ৭০০ টাকা এবং কাইকলা বা কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মজুমদার/ইএইচ