আ.লীগের শেষ তিন মাসে কোটিপতি বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ তিন মাসে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে ৭৬ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে কোটি টাকার হিসাবগুলোতে আমানত প্রায় ৪৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদক বলছে, চলতি বছর মার্চ প্রান্তিক শেষে শেষে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। জুন প্রান্তিক শেষে ১ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি। সে হিসাবে তিন মাসে ১  কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ২ হাজার ৮৯৪টি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, এক কোটি টাকা বা তার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা গত ৪ থেকে ৫ বছরে স্থিরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; প্রধানত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাগুলোর মধ্যে। তিনি বলেন, যদিও অনেক উদ্যোক্তা মুদ্রাস্ফীতির কারণে কষ্টে আছেন, বড় ব্যবসায়ীরা লাভের দিকে নজর দিচ্ছেন যেটি এসব হিসাবের আমানতের বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

তবে, সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৫.৮৫ কোটি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ৭২ শতাংশ, অর্থাৎ ১১.৪৩ কোটি হিসাবের আমানত ৫ হাজার টাকার কম। এই হিসাবগুলোতে গড়ে ৫৯০ টাকা আমানত রয়েছে। অন্য কথায়, দেশের একটি বড় অংশের মানুষের ব্যাংক আমানতের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন যে, স্থির আয়ের ব্যক্তিদের হিসাবগুলো কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। এছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ছোট ও বড় ব্যবসাগুলো খুব বেশি ভালো করতে পারছে না, যা তাদের নতুন করে বড় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেনি। এর ফলে, এই মূল্যস্ফীতির সময়ে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ার সুযোগ কম ছিল।

এই অর্থনীতিবিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা অজ্ঞাত ব্যাংক আমানতগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

ড. ফাহমিদা আরও বলেন, ব্যাংক আমানতের বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও, মতিউরের দুর্নীতি মামলার মতো সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। এছাড়া, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত অজ্ঞাত আমানতের রিপোর্টও রয়েছে। কোটি টাকার বেশি থাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যাচাই করা প্রয়োজন, এসব হিসাব ভুয়া কি না।

ফাহমিদা খাতুন উল্লেখ করেন, এক কোটি টাকা বা তার বেশি থাকা হিসাবের সংখ্যা বাড়ার কারণ হলো সমাজে বেড়ে চলা বৈষম্য।

কোটিপতি বাড়ার এই পরিসংখ্যান দেশের মধ্যে মারাত্মক অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ফুটিয়ে তোলে এবং নির্দেশ করে। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তাদের টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে হাতে রাখছেন।

আরএস