কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০, নাগালের বাইরে সবজি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

হঠাৎ করেই আবারও কাঁচা মরিচের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এক দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে এই নিত্যপণ্যটির দাম। আবারও চড়েছে সবজির বাজারও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সবজির বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রাহাত জানান, বুধবার এই মরিচ ছিল ২৪০ টাকা কেজি।

হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, ‍‍`শুনলাম বর্ডার বন্ধ। মরিচ ঢুকে নাই। তাই দাম বেশি।’

ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা কামাল হোসেন নামে একজন বলেন, ‍‍`আমরা কারওয়ান বাজার থেকে সবজি আনি। ওইখানেই দাম অনেক। পাইকারিতে দাম না কমলে আমগো হাতে কিছু নাই।‍‍`

এদিকে হঠাৎ দাম বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন অনেক ক্রেতা৷ মুক্তার আলী নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‍‍`আড়াই শ গ্রাম মরিচ ১০০ টাকা! চিন্তা করা যায়? সব কিছুর দাম বাড়তি। এইভাবে চলে নাকি?‍‍`

কাঁচা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় তিনি বিকল্প পথ ধরেছেন বলে জানান। মুক্তার আলী জানান, কাঁচা মরিচ না কিনে ১০ টাকার শুকনো মরিচ কিনেছেন তিনি।

১০০ টাকার ওপরে সবজি

এদিকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। শুধু তাই নয়, কাঁচামরিচের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। মুরগি আর মাছের দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না, ভেবে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। সরকারের পট পরিবর্তনের ডামাডোলে বাজারদর নিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত নিম্ন-মধ্যবিত্তদের।

বিক্রেতারা বলছেন, শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, উৎপাদন এলাকায়ও চড়া সবজি দর। শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে তবুও মোকামগুলোতে সরবরাহ কম। তারা বলছেন, বন্যার কারণে সবজির জোগান কমেছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দাম বাড়লেও গত সপ্তাহের চেয়ে ডিম, পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু চারটি সবজি। এগুলো হলো পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও মুলা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা দরে। এছাড়া পটোল, ঢ্যাঁড়স ও মুলার কেজি বাজারভেদে ৬০-৮০ টাকা।

বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা দরে। এরমধ্যে আছে গোলবেগুন, বরবটি, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, ধুন্দলের মতো সবজি। এসব সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে নামছেই না।

সবজির খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এসব সবজির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা।

কয়েক সপ্তাহ ধরে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে বেড়েছে ক্রেতাদের অস্বস্তি। আজ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে। কখনো কখনো ৪০০ টাকা ছাড়িয়েও যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পাইকারি কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি অস্বাভাবিক। উত্তরাঞ্চলেরও বেশ কিছু এলাকায় বন্যা হচ্ছে। ফলে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেও সরবরাহ কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সেজন্য উৎপাদন এলাকায় কৃষকরাও এখন তুলনামূলক দাম বেশি নিচ্ছেন।

ডিমের দামও চড়া

এদিকে, আমদানির উদ্যোগ ও শুল্ক কমানোর খবরে গত তিন দিনে ডিমের দাম কমেছে। শুক্রবার প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা সপ্তাহের শুরুতেই ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

কমেনি মুরগির দাম

তবে এ সময় ব্রয়লার মুরগির দর কমেনি। এখনো ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। সোনালি জাতের মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।

ভারত রপ্তানির শর্ত শিথিল করায় দেশের বন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। তারপরও কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে।

আরএস