মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে গেলে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের। সবজি থেকে অন্যান্য নিত্যপণ্য, সবকিছুই যেন নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও সবাই দুষছেন চাঁদাবাজিকে। অধিকাংশেরই অভিমত, সড়কপথে পণ্য পরিবহনে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। পাশাপাশি উৎপাদনকারী চাষির কাছ থেকে সবজি শহুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছা অবধি অনেকবার হাত বদল ঘটে। আর যতবার হাত বদল ঘটে, ততবারই বাড়ে দাম। এবার এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নেওয়া হয়েছে নতুন উদ্যোগ, ট্রেনে পরিবহন করা হবে সবজি।
জানা গেছে, দেশের ১৫টি অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য পরিবহন করবে রেলওয়ে। তিনটি স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় সবজি, ফলমূল, মাছ ও ডিম সরবরাহ করা হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার থেকে ট্রেনে শাক-সবজি, মাছ, ডিম ও ফল পরিবহন শুরু হবে।
আরও জানা গেছে, খুলনা, রাজশাহী ও পঞ্চগড় থেকে সপ্তাহে একদিন চলবে স্পেশাল পারসেল ট্রেন। এতে একদিকে যেমন মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারের দৌরাত্ম্য কমবে, অপরদিকে কমবে দামও। একইসঙ্গে রাজধানীবাসী পাবে টাটকা সবজি।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাকে করে গাড়ির অর্ধেক পণ্য নিলেও যে ভাড়া দিতে হয়, ট্রাকভর্তি পণ্য নিলেও সেই একই ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ট্রেনে নিলে ভাড়া দিতে হবে পণ্য হিসেবে, এতে খরচ কমবে। পাশাপাশি ট্রেনে গেলে যানজটের ভয় নেই, সময় সাশ্রয় হবে। আবার অল্প খরচেও পণ্য পরিবহন করা যাবে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ট্রেন চালু হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীর পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে।
দেশে সবজির চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয় যশোর অঞ্চল থেকে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, যশোর স্টেশন থেকে কৃষকদের জন্য অন্তত দুইটি বগি রাখা উচিত। এতে তাদের পরিবহন খরচ কমে আসবে। যার প্রভাব পড়বে রাজধানীর সবজির বাজারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, রেলের ভাড়া তুলনামূলক কম। এ ছাড়া সহজে ও পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। সেই লক্ষ্যে আমরা আপাতত খুলনা, রাজশাহী, পঞ্চগড় এই রুটগুলোকে নির্ধারণ করেছি। সপ্তাহে পণ্য নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে একদিন।
তিনি আরও বলেন, চাহিদা বাড়লে ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত লাগেজ ভ্যান যুক্ত করা হবে। ভাড়া ঠিক করা হয়েছে কেজি প্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দুই টাকা। সাড়ে ১২টা বা ১টার মধ্যে ট্রেনগুলো যাতে তেজগাঁও পৌঁছে যায়, সেভাবে সময় নির্ধারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২১ সালে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষমেষ তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে লাভজনক না হলেও আম ও গরু পরিবহনে বিশেষ ট্রেন চলে।
বিআরইউ