বাজারে আসছে শীতকালীন সবজি, জনমনে কিছুটা স্বস্তি

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সব ধরনের শাক-সবজি। দোকানগুলোতে শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে কমতে শুরু করেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতা। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। ক্রেতাদের স্বস্তি ফিরতে শুরু করছে বাজারে।

সপ্তাহের ব্যবধানে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এর ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে জনসাধারণের মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, মাসখানেকের মধ্যে বাজারের উত্তাপ আরও কমে আসবে।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, বনানীও, শ্যামবাজার কাঁচা  বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কাঁচা বাজারগুলোতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহের বাজারেও বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। বাজারে করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। এ ছাড়া, বর্তমান বাজারে ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা যা আগে ছিল ১০০ টাকা, পটল ৫০ টাকা যা পূর্বে ছিল ৬০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা যা ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, কপি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা। আর প্রতি প্রতি কেজি কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শিম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বাজার সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, কাঁচামরিচের দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহেও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে নিম্নমুখী শাকের বাজারও।

লালশাকের আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

এদিকে, বাজারে কিছুটা সবজির দাম কমে আসায় স্বস্তি দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে।

ফাহাদ হোসেন বলেন, বাজারে শাক-সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আরেকটু কমলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। জনগণের কাছে এখন তারা আস্থার প্রতীক। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তোলে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সরকার মনিটরিং বজায় রাখলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রতিদিন মাছ-মাংস খাই না। শাকসবজি খেয়েই বাঁচি, এগুলোর দাম বেশি থাকলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

কাজী পলাশ নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে প্রতিদিন বাজার মনিটরিংসহ আরও বেশকিছু কার্যক্রম চলমান রাখার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। জনগণের প্রত্যাশাও ছিল-এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে। কিন্তু বাজার কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না- এমন প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না- বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। বিগত সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী ছিল- ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। টাকার অবমূল্যায়ন ও সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। আমাদের দেশের সমস্যা বহুমাত্রিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের মুদ্রানীতি, সিস্টেম পলিসি, সুদনীতি, বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পলিসি জড়িত।প্রায় মাসখানেক ধরে দেখছি বাজার চড়া। এই নতুন সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা এখনও তেমন কিছুই দেখছি না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত বাজারে তদারকি বাড়ানো এবং যেকোনো মূল্যে এই নিয়ন্ত্রণ করা। নয়তো সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার ব্যর্থ হবে।

দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা আকাশ সরকার বলেন, বাজারে সবজির দাম কমেছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সবজির দাম আরও কমে যাবে। বেগুনের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেগুনের মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই বেগুনের দাম বেশি রয়েছে।

আরেক বিক্রেতা মুজাহিদ আহমেদ বলেন, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব না পড়লে, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই; বরং আরও কমবে।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং নীতিনির্ধারকেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু উদ্যোগগুলো কার্যকরভাবে হচ্ছে না, যা বাজারের বর্তমান অস্থিরতার অন্যতম কারণ। টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) নিত্যপণ্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে, কিন্তু এটি শুধু বড় শহরের সীমিতসংখ্যক জনগণের জন্য কার্যকর। এই উদ্যোগগুলো গ্রামাঞ্চলে বা তুলনামূলকভাবে কম জনবহুল এলাকায় পৌঁছাতে পারে না।

সরকারকে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা, টিসিবি‍‍`র কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

এছাড়া, কৃষকদের জন্য সঠিক দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া দরকার, যাতে তারা ন্যায্যমূল্য পায় এবং পণ্যের সরবরাহও ঠিক থাকে।

এফআর/বিআরইউ