দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টানা চারমাস ধরে প্রতিমাসে গড়ে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল সবশেষ নভেম্বর মাসেও। এই মাসের পুরো সময়ে এসেছে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার বা ২১৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। যা বাংলাদেশি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে) প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন প্রায় ২১৯ কোটি (২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার)। মাসটিতে প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ডলারের বেশি।
এসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এসেছে ৮২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোট ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১২২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। পরের মাস আগস্টে আসে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, অক্টোবরের ২৪০ কোটি ডলার এবং নভেম্বর মাসে এল ২১৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
এ ছাড়া গত জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মাস মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৮ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনার পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তির। এভাবে রেমিট্যান্স এলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। এদিকে পতিত সরকারের সময়ে ব্যাংকখাত থেকে লুটপাট হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি সাবেক সরকারের আমলে প্রতিবছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে শ্বেতপত্র কমিটির তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠানো পরিমাণ বাড়িয়েছে।
আরএস