পুঁজিবাজারে দশ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার দুর্বল আইপিও এসেছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজারে এসেছে। ভালো কোম্পানি আসছে একেবারেই নগণ্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজারে এসেছে। ভালো কোম্পানি আসছে একেবারেই নগণ্য। বাজারে বিনিয়োগকারী সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারী আরও অনেক কম।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সক্ষমতা পরিমাপের অন্যতম একক বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ যদিও এক শতাংশ বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা ০ দশমিক ৫১ শতাংশের বেশি নয়। বাজারে নতুন আইপিও, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের অগ্রাধিকারী রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা সক্ষম করতে না পারি তাহলে হয়তো আবারও ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাব। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে হলে কিছুটা সময় আমাদের লাগবে। পুঁজিবাজার লিডিং এবং কো-অর্ডিনেশনের জায়গাটা হোল্ড করবে। ডিএসইকে সামনে এগিয়ে নিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবল লাগবে। আমরা নেতৃত্ব গুণাবলি সম্পূর্ণ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি বাজারে আস্থা আগের চাইতে ভালো হবে, বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরে আসবে । আইটি সিকিউরিটি অডিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ওয়েবসাইটকে আমরা রিভাইব করছি। বিশেষ করে কিভাবে আইপিওটাকে ডিজিটালাইজড করা যায়। বন্ড মার্কেটও পরিচালনা সমস্যা, আমরা বিএসইসির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সে কাজও আমরা করছি। ইনসাইডার ট্রেড এবং ম্যানুপুলেশন কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। মার্কেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজারে রিসার্চের মাত্রা খুবই কম এবং এটা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইর সুরক্ষা যদি আইনগত হয় তবে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবো। সিসিবিএল থাকবে এমনটা আমরা চাই না। বিএসইসি, ডিএসই, সিসিবিএল এ বিষয়ে সম্মানিত হবে কাজ করছে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে সরকারের নজরে থাকলেও পুঁজিবাজার উপেক্ষিত হয়েছে। পুঁজিবাজার কিভাবে সরকারের পাইরোটি লিস্টে আসে তা নিয়ে কাজ করছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজার ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। আমাদের দেশেও এটা করা সম্ভব।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে না। আমরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছি।

পুঁজিবাজারে ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেছেন, গত ১৫ বছরে অনেক সেক্টরে জালিয়াতি হয়েছে এসব নিয়ে সবাই বলছে। তবে গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে কী পরিমাণ জালিয়াতি হয়েছে, এ ব্যাপারে কেউ কোনো কথা বলছে না, আমরা বিচার না জানতে চাই। এটা আমাদের জানার অধিকার আছে। পুঁজিবাজারে কী কী অনিয়ম হয়েছে এটার একটা খতিয়ান দরকার আছে। আমরা জানতে চাই, এটা থাকলে সবাই অনিয়মের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাজেটের আগে ট্যাক্স অথরিটি আমাদের সঙ্গে বসবেন। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ট্যাক্স সুবিধা পাবো বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ডিবিএর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে যে পেশার গ্রুপগুলো হয়েছে। আমাদের দেশে সেগুলো পুরোপুরি কাজ করেছে, এমন কোন ভালো অতীত নেই। তবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার চাপের ফলে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। এটা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে সবকিছু এফআইডি নির্ভর করা হচ্ছে। অনেক কিছুই প্রাইমারি রেগুলেটরের হাত থেকে নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার ফলে আমরা বিভিন্নরকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ডিএসই যদি প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে পুঁজিবাজার ইতিবাচক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। গত ১৫ বছরের অনিয়মের বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে সকল অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে না। আপনারা সহযোগিতা করলে; অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়। আপনারা তুলে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

আরএস