কৃষিঋণ বিতরণে বন্যার প্রভাব

আনোয়ার হোসাইন সোহেল, ঢাকা প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

বিদায়ী বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিনমাসে দেশের ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষকরা পুরোপুরি ফসল ফলাতে পারেননি। এতে উৎপাদন ও বিপণন ব্যাহত হয়েছে। ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে কমেছে কৃষিঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ প্রথম পাঁচ মাসে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা বাৎসকির লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের প্রধান বলেন, জুলাইয়ের পার সার্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে এসেছিল। তখন মানুষ বের হতে পারেনি। আবার ১০-১২ ব্যাংক কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল। তারাও তখন ঋণ দিতে পারেনি। তাই সার্বিক কৃষি ঋণ বিতরণে এটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু কৃষি ঋণের টার্গেট দেয়া থাকায় এটা আমাদের দিতেই হবে। আগামীতে আশা করছি ঋণ বিতরণ বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, কৃষি ঋণ বিতরণের স্থিতি ৫৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ৭০ কোটি। বকেয়া রয়েছে ২৯ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা এবং মেয়াউত্তীর্ন বকেয়ার (খেলাপি নয়) পরিমাণ ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি। তথ্যমতে মোট ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ শতাংশ।

কৃষি ঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরো বেশি করে কৃষি ঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে জোর না দেয়ায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরো জোরালো হয়ে উঠতে পারে।

সাম্প্রতিক বন্যায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে ৭০ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ কমেছে ৩১ দশমিক ১১ শতাংশ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২৪ সালের শেষার্ধে ব্যাংকসহ পুরো ব্যাবসায়িক কার্যক্রমই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। তাছাড়া পরপর তিনটি বন্যার ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ কমে গেছে। বেড়েছে বকেয়ার পরিমাণও। আগামীতে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যায়।

হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণের হারের চেয়ে কৃষি ঋণের খেলাপি ঋণের হার অনেক কম। কারণ বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে। পতিত সরকারের আমলে অনেক ব্যবসায়ী দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।

সোহল/ইএইচ