চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, শিক্ষক-সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি

চবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ০৩:৪১ পিএম

ক্যাম্পাসে আবাসিক হলের দেওয়ালে চিকামারাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ২০জন আহত হয়েছেন। ভাংচুর করা হয়েছে আবাসিক হল। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর ও কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

সংঘর্ষে জড়ানো পক্ষ দুটি হলো- শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয় ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)। বিজয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল ও ভিএক্স নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

সূত্রে জানা গেছে, চবির এ.এফ.রহমান হলে দীর্ঘদিন ধরে থাকে বিজয় ও ভিএক্স এর কর্মীরা। নিজেদের একক আধিপত্য বিস্তারে হলের দেয়াল জুড়ে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা ‍‍`BIJOY‍‍` নামে চিকা মারা শুরু করে বছরখানেক আগে। করোনা পরবর্তী সময়ে চবি প্রশাসন এইসব বগি ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন ও চিকার উপর রং করে দেয়। তবু বিজয়ের কর্মীরা আবারও চিকা লাগায়। হলটিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ভিএক্সের অনুসারীরা গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনভর ‍‍`VX‍‍` নামে চিকা মারা শুরু করে। পরে বিজয়ের অনুসারীরা দেওয়ালের চিকা মুছে দিলে করে দিনভর দুই পক্ষের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা রাতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। 

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ভিএক্সের কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে বিজয় গ্রুপের কর্মীদের হল থেকে বের করে দেয়। পরে বিজয় গ্রুপ আলাওল হলের মাঠে অবস্থান নিয়ে পাল্টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

সংঘর্ষ চলাকালে এ এফ রহমান হলের অর্ধশতাধিক রুম ভাংচুর করে বিজয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। ভেঙে দেওয়া হয় পানির ট্যাংক ও পাইপ লাইন। এসময় একজন শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেন বিজয়ের এক কর্মী। এছাড়া কর্মরত সাংবাদিকদেরও হত্যার হুমকি দেন বিজয় গ্রুপের একাধিক কর্মী। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশিয় অস্ত্রের মহড়া দেয় বিবাদে জড়ানো ছাত্রলীগের অনুসারীরা।

এসময় সংঘর্ষের খবর শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও। টানা তিন ঘণ্টা ধরে চলা উভয়পক্ষের সংঘর্ষ পুলিশ মোতায়েন করে স্থিতিশীল করা হয়েছে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া ও প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্য, হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার ওসি এর উপস্থিতিতে সংঘর্ষরত দুই গ্রুপের নেতাদের মাঝে সমঝোতা হয়।

ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, বিজয়ের কর্মীরা ভিএক্সের কর্মীদের দেয়াল লিখন মুছে ফেলাকে নিয়ে মূলত আপত্তি। হলতো কারো একার সম্পত্তি না। যে কারো লেখার ওপর অন্য কেউ লিখবে। এ জন্য ভিক্সের কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে সার্বিক বিষয়ে চবি প্রশাসন সবার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা তা মেনে নিয়েছি।

বিজয় গ্রুপের উপ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নয়ন কুমার মোদক বলেন, হলে চিকামারা নিয়েই মূল বিরোধ। আজকে আমাদের যেসব কর্মী উচ্ছশৃঙ্খল আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চবি প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা তার সাথে একমত।এখন আর কোনো ঝামেলা হবে না।

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ে হাটহাজারী থানার ওসি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কঠোর হতে চাই না। তবে চবি প্রশাসনের নিয়ম মানতে আমরা বাধ্য। সংঘর্ষে জড়ালে ক্ষতি নিজেদেরই হয়।

হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দেশ ও জাতির উভয়েরই ক্ষতি। আমাদের প্রশাসনের উপর অনেক চাপ রয়েছে। প্রশাসন কঠোর হলে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, চিকা মারা নিয়ে এই সংঘর্ষ। তাই আমারা এ.এফ. রহমান হলের সকল চিকা মুছে দিব। কেউ আর চিকা দিতে পারবে না। আর যারা শিক্ষক ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করেছ তাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবাসিক হল ভাঙচুর নিয়ে চবি প্রক্টর আরও বলেন, এই হল তোমাদের থাকার জায়গা। যারা হলে ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই ছাড় পাবে না। আমরা একাডেমিক ও আইনগত পদক্ষেপ নিব।

এসএম