ইন্টারমিডিয়েটে পড়া অবস্থায় অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক। সেই থেকেই করে যাচ্ছেন একের পর সাড়া জাগানো সিনেমার রিমেক। দুর্দান্ত সেই রিমেক গুলো মূহুর্তেই সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। কখনো বা তিনি করে থাকেন কসপ্লে। প্রয়াত `হুমায়ুন ফরিদির কসপ্লে করে নেট দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করে গুণী এই অভিনেতা। আয়নাবাজি, মনপুরা, তামিল সিনেমা `৯৬` ছাড়াও হলিউডের বক্স অফিস মাতানো সিনেমা জোকার এর রিমেক করে গুনীজনের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
বলছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ জিসান আহমেদ এর কথা। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থেকেই এই বিভাগে ভর্তি হওয়া। এরপর থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু-বান্ধব এর সহযোগিতায় উপহার দিচ্ছেন একের পর এক ধামাকা।
এবার তিনি হাজির হয়েছেন ভারতীয় সিনেমা জগতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সিনেমা `থ্রি ইডিয়টস`। থ্রি ইডিয়টসের নাম শুনেনি এমন সিনেমা প্রেমী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সিনেমার প্রতিটি ধাপেই শিক্ষণীয় বিষয় থাকায় দর্শক মহলে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। অনেকেই বলে থাকেন, এই সিনেমা যতবার দেখি প্রতিবারই নতুন কছু শিখতে পারি।
এরকম একটি সফল সিনেমা রিমেক করা নিয়ে কথা হচ্ছিল জিসানের সাথে। জিসানের রিমেক এ থাকে পুরো সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্লিপ। ডিউরেশন হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ মিনিট। এ পর্যন্ত করা রিমেক গুলা সম্পূর্ণ নিজ খরচেই চালিয়েছেন। হলিউড-বলিউডের দুর্দন্ত এসব সিনেমা গুলো বিগ বাজেটের। এসব বিগ বাজেটের সিনেমার রিমেক করতে গিয়ে জিসানের বাজেট সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হয়। কখনো বা পর্যাপ্ত টাকার অভাবে কাজ পিছিয়ে যায়।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, থ্রি ইডিয়টস এর কাজ ও শুরু করে একদম শূন্য বাজেটে। সচরাচর কোন স্পনসর না পাওয়ায় এ যাবত তার করা রিমেক গুলা সম্পূর্ণ নিজের খরচে করেছে। `জোকার` করতে গিয়ে তার কস্টিউম বাবদ যা খরচ হয়েছে তার সম্পূর্ণ খরচ নিজেই বহন করেছেন। এবার থ্রি ইডিয়টস এর রিমেক করতে গিয়ে তাকে ৫৫-৬০ জন কে কাস্ট করতে হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সদিচ্ছায় জিসানের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের জন্য কোন পারিশ্রমিক এর ব্যাবস্থা না থাকা সত্তেও শুধুমাত্র জিসানের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য সবাই তার সাথে কাজ করে থাকে। এ মূহুর্তে তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একজন স্পনসর এর।
বরাবরের মতো এবারও সুপার হিট হবে বলে আশাবাদী এই অভিনেতা। বলেন, সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে কাজ গুলো করে থাকি। দর্শকেরা আমার করা কাজগুলো কে গ্রহণ করেছে ওইটুকুই প্রাপ্তি। এসব কারণেই কাজের উৎসাহ পাই। সহপাঠী, সিনিয়র,জুনিয়র সবাই কাজে সহযোগিতা করে থাকে। প্রশংসা পেয়েছেন চলচিত্র মহল থেকেও। মনপুরা করার পর প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তার কাজের প্রশংসা করেছেন। এবং ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেজ থেকে অই রিমেক ভিডিও শেয়ার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত চারমাস যাবৎ এই সিনেমার শুটিং করেছি। এখন প্রশংসার পাশাপাশি ভালো স্পনসর পেলে কাজের অগ্রগতি বাড়বে।
এই মুভিতে ক্যাম্পাসের সিনিয়র ভাই জুনিয়রদেরকে র্যাগ দিচ্ছে সিন টি খুবই আনন্দদায়ক ছিল। সে চরিত্রে জিসানের রিমেকে অভিনয় করেছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়ান। জিসানের সাথে তার কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘জিসান এই বয়সে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। বিভাগের ছোট ভাই হিসেবে ওর ডাকে সাড়া দেই, কিন্তু আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কাজ করতে পেরে খুশি। বিখ্যাত এই মুভির রিমেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যারেক্টারের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। একজন ভালো অভিনেতা, ডিরেক্টর হিসেবে জিসান অসাধারণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ হিসেবেও জিসান চমৎকার। তার এই কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে সে অদূর ভবিষ্যতে দেশের একজন বড় তারকা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
থ্রি ইডিয়টস এর ফারহানের চরিত্রে এই রিমেকে কাজ করেছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন। তিনি বলেন, ‘বন্ধু হিসেবে তার সাথে এই রিমেকে কাজ করি। এছাড়া এই চরিত্রে চ্যালেঞ্জিং কিছু সিন থাকায় আগ্রহ বাড়ে। কাজের অভিজ্ঞতা চমৎকার ছিল। জিসানের সাথে এই রিমেকে কাজ করতে পেরে আমি খুবই হয়েছি।’
সিনেমার পিয়া (নায়িকা) চরিত্রে কাজ করেছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাখি। তিনি বলেন, অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থেকে ভাইয়ের সাথে কাজ করা। বিভাগের বড় ভাইয়ের পাশাপাশি তার করা পূর্বের কাজ দেখে ভাল লেগেছে। তাই সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করি নি। কাজের অভিজ্ঞতাও রোমাঞ্চকর ছিল। এই প্রথম কোন রিমেকে কাজ করি। জিসান ভাইয়ের এই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় জিসানের ফেসবুক পেজ `জিসু এন্টারটেইনমেন্ট` এ রিমেক টি প্রচারিত হবে।
কেএস