ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতভর ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ৯ জন আহত হন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই হলের বর্ধিত ভবনের (এক্সটেনশন ভবন) একটি কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হলে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ৯জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। এদিকে, হলের অভ্যন্তরে এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে জরুরি সভা ডেকেছে হল প্রশাসন।
হল ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওই হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসিব মুক্তের পক্ষের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের (উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ) মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে নয়জন আহত হয়। এদের চারজনের মাথা ফেটে রক্ত বের হতেও দেখা যায়। আহতদের মধ্যে আছেন- জিওগ্রাফি বিভাগের ইমামুল হাসান, এপ্লাইড ম্যাথের মাহমুদুল হাসান, পারভেজ, রিদওয়ানুর, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের কল্লোল, কাউসার, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহেদ প্রমুখ।
এরমধ্যে চারজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ইমামুল হোসেন নামে একজন মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত বলে জানা যায়।
হল সূত্রে জানা যায়, তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী সাব্বির অনিক নামের এক কর্মীকে ৫০০৬ নং রুম থেকে বের করে সেটিতে তালা লাগিয়ে দেয় সাদ্দাম ও ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওই হলের নাঈম-মুক্তের গ্রুপ। পরে সৈকতের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে। এ কথা শুনে হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নাঈম এবং মুক্তের অনুসারীরা সৈকতের অনুসারীদের মারধর করে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয়।
এসময় ১০১৫, ৫০০৬, ৩০১০, ৪০০১, ২০০৪, ৪০১০, ৩০১৪, ২০০৯, ৩০০৮, ২০১৮, ৪০১৮, ৩০০৭ কক্ষগুলোতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা এবং ভাংচুর করা হয়। এতে সৈকতে অনুসারী প্রায় ৯জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এছাড়া হামলাকারীরা ৫০০৬ নং কক্ষে অবস্থান করা সাব্বির অনিকের মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের অনুসারী ও ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ফজলুল হক হলের দক্ষিণ ভবনে সিট সংক্রান্ত কারণে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমি আমার রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১০ থেকে ১২ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি। খাওয়া শেষে সবাই রুমে অবস্থান করছিলাম। এমতবস্থায় রাত দেড়টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন অতর্কিতভাবে দেশিও অস্ত্রসহ আমার রুমে হামলা করে। হামলা করে দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তৎক্ষনাৎ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলি। এসময় হামলাকারীরা ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী বলে স্বীকার করে।
এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে আমার কোনো নির্দেশনা ছিলো না এবং ছাত্রলীগে কোনো গ্রুপিং নেই। বরং আমার অনুসারীরাই আহত হয়েছে। অভিযোগটি তারা বেখেয়ালিভাবে করেছে। আমি নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছি কোন হল গিয়ে এখনও বসিনি কারা আমার রাজনীতি করে এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। হল সভাপতি- সেক্রেটারি সদ্য সাবেক হয়েছে হলের সবাই তার অধীনে রাজনীতি করতো। হামলায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সার্বিক ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমরা অবহিত হয়েছি। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভা থেকে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো। এবং যারা প্রকৃতপক্ষে দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেএস