জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সমাবর্তনপ্রত্যাশীরা।
সমাবর্তনপ্রত্যাশী এক ছেলে শিক্ষার্থী জানান, ওয়েবসাইটে তার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লগইন করলে অন্য আরেকজন মেয়ে শিক্ষার্থীর তথ্য দেখায়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা সমাধান না হওয়ায় তিনি অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে ওই ই-মেইল ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে আর রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না বলে জানান রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে তাকে নতুন ই-মেইল এবং মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।
এছাড়াও দীর্ঘসময় ওয়েবসাইটের সার্ভার ডাউন থাকা, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার কয়েক দিন পার হলেও ভেরিফিকেশন না হওয়া, শিক্ষার্থী এবং তাদের পিতা মাতার নামের বানান ভুল, পেমেন্ট ভেরিফিকেশন না হওয়া, শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদ না হওয়া, একাধিক সনদ উত্তোলনের অপশন না থাকাসহ নানাবিধ সমস্যার কথা জানান একাধিক শিক্ষার্থী।
সমাবর্তপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা এসব সমস্যার জন্য প্রশাসনের অপরিপক্বতাকে দায়ী করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ 'আমরাই জাহাঙ্গীরনগর' এ ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন পোস্ট দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মঈনুল রাকীব ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বলেন, টানা তিন দিন ধরে কনভোকেশনের রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম! অনেকে পেরেছেন, তাতে কী! একজনে ও যদি না পারে সেটিই হবে কনসার্ন। এতো বড় আয়োজনে এই আনাড়ী ব্যবস্থা কেন? টাকা নেওয়ার সময় তো কম নিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগ আছে, সিএসই আছে। কাজটি কারা করছে? এখনো সাইট ডেভেলপ করছে। অথচ নিবন্ধনের তারিখ বাড়াচ্ছেনা। আগে ঘোষণা দিলে সমস্যা কি? মানুষকে হয়রানি না করলে বাহাদুরি থাকে না?
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশনের কোন সমস্যা নেই। এখন কেনো এই সমস্যা হচ্ছে এটা যারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস ও রেজিস্ট্রেশন কমিটি) তারা বলতে পারবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিন দায় অস্বীকার করে বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কোন দায়ভার নেই। এ দায়ভার সফটওয়্যার যারা ডেভেলপ করেছে এবং কাজ করছে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক এম শামীম কায়সার বলেন, এটি ডেভেলপ করছি আমরা। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস কখনো চিন্তা করে নাই যে আমরা সমাবর্তন পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনে নিয়ে গিয়ে করবো। আর তাই পরীক্ষা অফিস আমাদের যে ডাটাগুলো প্রোভাইড করেছে সেগুলোয় কিছু ভুল আছে।
আর যে ডেটা গুলো আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কোনটাই ডিজিটাল ফরম্যাটে ছিলো না। ফলে ডেটাগুলোকে এক্সেলে কনভার্ট করে সিস্টেমে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটা পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর সাথে রিলেটেড বিষয়, তাই সিস্টেম এমনভাবে করা হয়েছে যে কোন ধরণের মিসম্যাচ হলে সে সরাসরি কিছু করতে পারবে না। ফলে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই এখন সব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য যে ইনফরমেশন প্রয়োজন তাই ওয়েবসাইটে চাওয়া হচ্ছে এবং বাকিটা যেনো শিক্ষার্থীরা এডিট করতে সে অপশন রাখা হয়েছে। আর যে সমস্যা গুলো হচ্ছে তা আমরা চিহ্নিত করে সমাধান ও করছি। যেহেতু প্রথমবার তাই এমনটা হচ্ছে তবে প্রথমবার দেখে যে আমরা ইগনোর করছি তা-না, আমরা গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।
আর ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ক্যাম্পাসে বা এর আশেপাশে আছে অথবা যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে অনাগ্রহী তাদের জন্য আমরা পুরাতন রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আজ থেকে দুটি বুথ চালু করেছি। এছাড়া কল সেন্টারে যারা কাজ করছে তারা একজায়গায় থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে। আর সার্ভার আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডাউন করেছি।
রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দু’দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে আমি উপাচার্য স্যারকে অনুরোধ করেছি যেনো আরও দু দিন সময় বাড়ানো হয়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার পিএস জানান তিনি সমাবর্তন সংক্রান্ত মিটিং এ ব্যস্ত আছেন।
কেএস