গুচ্ছ নিয়ে দোটানায় জবি, ভর্তি পরীক্ষা এপ্রিলে

জবি প্রতি‌নি‌ধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩, ১১:৪১ এএম

গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) থাকা না থাকা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও সুনাম নষ্ট হওয়া, ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় সেশনজট ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিসহ নানা অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিজস্ব পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফেরার দাবি তুলা হলেও এখন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে উপাচার্য বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত নিতে এ মাসেই বিশেষ একাডেমিক সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। এদিকে এপ্রিলের মধ্যেই গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে জুলাইয়ের মধ্যে  ক্লাস শুরু করতে চায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে দাবি তুলা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বতন্ত্র পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের হয়ে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় যাওয়ায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক মেধার মানে অবনমন ঘটেছে। গুচ্ছ ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হচ্ছে। এতে মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঢাকাসহ স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতি চালু থাকা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ক্লাস শুরু করলেও গুচ্ছ ভর্তিতে অব্যবস্থাপনার ফলে ছয় মাসেও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারায় সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। ইতোমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জটের শঙ্কা করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা দৈ‌নিক আমার সংবাদ‌কে বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে গেলে গুচ্ছের পুরো প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার শঙ্কায় সরকারি চাপের কারণেই এই পদ্ধতি থেকে বের হতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয়টি। গতবছর গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে গুচ্ছে থেকে যায় জবি। এবারও একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে জানান তারা।

তবে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে গত দুই শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু মাইগ্রেশনের অবাধ সুযোগ থাকায় ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পছন্দসই বিষয় না পাওয়া পর্যন্ত মাইগ্রেশনের সুবিধা নিচ্ছেন। সে কারণেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু করতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাই ভোগান্তিতে পড়েছে। ফের নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় হলেও প্রস্তুতি নেয়া যায়নি। এবার মাইগ্রেশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দ্রুতই উপাচার্যরা বসে ভর্তি পদ্ধতি ও নিয়মাবলি ঠিক করবেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দৈ‌নিক আমার সংবাদ‌কে বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার ফলে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের শিক্ষার্থীদের পাচ্ছিনা। দিনে দিনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আমাদের নিজস্বতা বলতে কিছুই আর থাকছে না।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ভালো ছিল। কিন্তু এর ত্রুটিগুলো সমস্যার সমাধানের বদলে আরও বেশি জটিলতা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের ভুগিয়েছে। নিজস্ব পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ক্লাস শুরু করছে। গুচ্ছে সেটা ছয় থেকে সাত মাস চলে যাচ্ছে। এতে সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক দৈ‌নিক আমার সংবাদ‌কে বলেন, ‘গুচ্ছে থাকা না থাকার ব্যাপারে আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। এ মাসেই একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সবার সাথে আলোচনা করে যেটা ভালো মনে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য শিক্ষামন্ত্রী আমাদেরকে অনুরোধ করেছিলেন গুচ্ছে থেকে যাওয়ার জন্য। সেজন্য গতবারও আমরা গুচ্ছে থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি। একটা নতুন প্রক্রিয়া শুরু হলে সেখানে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকেই। এবার অনেক সমস্যা দূর হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কম টাকা খরচ হয়েছে। এখন একেবারে বন্ধ করে দিলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না।’

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ইমদাদুল হক বলেন, ‘এসব বিষয়ে আগামী সপ্তাহে উপাচার্যদের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা চিন্তা করছি এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে। যেন দুই মাস সময় নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে জুলাইয়ে আমরা ক্লাস শুরু করতে পারি।’

কেএস