জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের আবাসিক হলে দেয়াল টপকে প্রবেশ করে চুরির চেষ্টা ও ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক। এ ঘটনার পর আতঙ্কে রাত পার করছেন ছাত্রীরা। রোববার (১২ মার্চ) ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল, শেখ হাসিনা হল ও বেগম খালেদা জিয়া হলে এ ঘটনা ঘটে।
সুফিয়া কামাল হলে অবস্থানরত আইন ও বিচার বিভাগের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টায় নিচতলায় ৫১ ব্যাচের গণরুমের (ডাইনিং) জানালা ইট দিয়ে ভেঙে ফেলে। এসময় মেয়েদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা সবাই বের হয়ে মাঠে জড়ো হয়।
শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, ‘এসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকটা ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করে। হল সুপারকে জানানো হলে তিনি গার্ড নিয়ে জায়গাটি দেখে আসেন এবং উল্টো মেয়েদেরকে দোষারোপ করে বলেন, আমরা কেন জানালায় কাগজ লাগাইনি, পর্দা দেইনি। আমাদেরকে বলা হয়েছে ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে রাখতে।
সুফিয়া কামাল হলের দর্শন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানান, এ ঘটনার পর মেয়েদেরকে জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দেন হল সুপার। এরপর একই ঘটনা ঘটে ভোর সাাড়ে ৫টার দিকে। সবার চিল্লাচিল্লিতে এবার হলের অনেক মেয়ে উঠে যায়। লোকটা আবার এসে চিৎকার করে ভয় দেখায়। মেয়েরা সবাই মাঠে চলে আসে। তাদের কান্নার আওয়াজে হলের বাকি ফ্লোরের মেয়েরাও নেমে আসে।
সুফিয়া কামাল হলে এ ঘটনার পর একই ব্যক্তি শেখ হাসিনা হলে ঢুকেও একই ঘটনা ঘটায়। শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী সিলভী বলেন, মেয়েদের হলে ঢুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট করা হচ্ছে, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা হচ্ছে। খুবই আশ্চর্যের বিষয়, ওই নিপীড়ক খুব ঠাণ্ডা মাথায় নিশ্চিন্ত মনে জানালার কার্নিশে বসে মেয়েদের ঘুম থেকে ডেকে তুলছে এবং হ্যারেস করে যাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রী বলেন, আনুমানিক ভোর চারটার দিকে আমি ও আমার রুমের সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের জানালায় কারও নক করার আওয়াজ। তার কিছুক্ষণ পরে একজন লোক এক নাগাড়ে অত্যন্ত বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। ভয় পেয়ে রুমমেটদের ডেকে তুলি এবং চিৎকার করে হল সুপার ও খালাদের ডাকতে যাই। আমাদের এত চিৎকারের পরও লোকটির কোনো ভ্রম্নক্ষেপ ছিল না। তিনি তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে একইভাবে অকথ্য ভাষায় বকে যাচ্ছিলেন। পরে গার্ডদের জানানো হলেও তারা আর কাউকে খুঁজে পায়নি।
অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের এ ঘটনার শিকার হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীরাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৪টা নাগাদ ১১৭ নম্বর রুমের জানালায় দাঁড়িয়ে একজন অনেকক্ষণ যাবৎ গালিগালাজ করেছেন। জানালা দিয়ে মাথা আর হাত ঢুকিয়েছে।
এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট হোসনে আরা বলেন, ভোররাতে নিচতলায় এ ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সিসিটিভি, কাঁটাতারের জন্য প্রশাসনকে বলেছি। আশা করি এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এই ঘটনায় গার্ডদের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট তাহমিনা আক্তার বলেন, আমি ঘটনাটি শোনামাত্রই আমার হলে কথা বলেছি। গার্ডরা তখনই সেখানে যায়। গিয়ে কাউকে তারা দেখতে পায়নি। তবে এমন ঘটনা যেহেতু ঘটেছে আমরা হলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করব।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ নিব।
এঅরাএস