১২ দফা দাবিতে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচী, উপাচার্য অবরুদ্ধ

যবিপ্রবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম

সেমিস্টার ফি কমানো, নবনির্মিত ভবনের লিফট লাগানো, দুর্নীতির অভিােগে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতি মামলায় চুড়ান্ত অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতিসহ ১২ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বিক্ষোভ করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ। 

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুই ফটক, আবাসিক হলের ফটক ও বাস বন্ধ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ক্যাম্পাসের মধ্যে আটকে রাখেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে যবিপ্রবি ক্যাম্পাস। 

এসময় যবিপ্রবি উপাচার্যের কার্যালয়ের বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রায় ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপাচার্যের নিজ কার্যালয়ে আটকে রাখেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরবর্তীতে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে তুমুল বাকবিতন্ডা হয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ অনুসারীদের। উপাচার্য সাথে আলোচনা ও বাকবিতন্ডায় দাবীর সুরাহা না হওয়ায় রবিবার থেকে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

শাখা ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবিগুলো- শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষার সুবিধার্থে অনতিবিলম্বে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের লিফট লাগনো, বিশ^বিদ্যালয়ের য়োল ও ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছবি বিকৃত মামলায় অভিযুক্তদের চ‚ড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সুষ্ঠু  তদন্ত ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর উপর শাস্তি আরোপ বা সরাসরি বহিষ্কার না করা ও বহিষ্কৃত সকল শিক্ষার্থী উপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রতাহার করার দাবি জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যায়ের যেসকল উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি রিপোর্ট এসেছে সেখানে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ উক্ত কমিটিতে থাকতে পারবেন না এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তধীন সকল শিক্ষক, কমকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তদন্ত শেষ না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ নিষেধ করার দাবিও জানান তারা। ফায়ারের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং উক্ত কাজে আর্থিক লেনদেনের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানান তারা। 

এছাড়া সেমিস্টার ফি কমানো, প্রথমবার রিকেট (অকৃতকার্য) ফি মওকুফ এবং দ্বিতীয় রিটেক (অকৃতকার্য) ফি প্রতি ক্রেডিট বাবদ সর্বোচ্চ ২৫ টাকা নির্ধারণ, বিভাগ উন্নয়নের নামে অবৈধ টাকা নেওয়া বন্ধ, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কিউআরকোড সম্পকিত খাতা প্রদান ও ইমপ্রæভমেন্ট সিস্টেম চালু করার দাবি জানানো হয়। উপাচার্যের এয়ারমার্ক বাংলো ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকমীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কট‚ক্তিকারীদের বহিষ্কারের দাবিও জানান তারা।

যবিপ্রবি উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আনুমানিক  দুপুর ১২ টার সময় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা রেজিস্ট্রার দপ্তরের সামনে তাদের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে অবস্থান নেন। তখন আমি কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে আমার উচ্চবাচ্য হয়। এ ঘটনার ১০-১৫ মিনিট পর তাদের আরও বেশ কিছু কর্মীদের নিয়ে ১২ দফা দাবীতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ও আমাকে আমার কার্যালয়ে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং এক পর্যায়ে আমার কার্যালয়ের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ছাত্রলীগের কারণে রেজিস্ট্রার দপ্তর, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পূর্ত দপ্তর, প্রকৌশল দপ্তর, হিসাব দপ্তর সহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কাজ আটকে রয়েছে। তাদের কারণে দাপ্তরিক কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় না। এর কারণ কি হতে পারে তা আমার থেকে আপনারাই ভালো বুঝবেন। 

ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবী সম্পর্কে ড. আনোয়ার বলেন, সকল অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি আমাকে দ্বিতীয় মেয়াদে যবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত করেছেন এবং গবেষণা ও কাজের সম্মাননা স্বরূপ একুশে পদকেও ভূষিত করেন। এরপরও যদি তারা আমাকে অসম্মান করে তবে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারকেই অবমাননা করার শামিল। অতি দ্রুত লিফটগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুদকের তদন্ত কমিটি গঠন করা সাপেক্ষে আমরা কাউকে বহিষ্কার করতে পারি না তবে অপরাধ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ফায়ার সিকিউরিটির কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবার কথা কিন্তু শাখা ছাত্রলীগ আমাকে এ কাজের বিষয়ে একাধিকবার বাধাগ্রস্ত করেছে। আগামী দু মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হয়ে যাবে। 

সেমিস্টার ফিস ও রিটেকের ফি নিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাথে আলোচনা করতে হবে যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের বিষয়। এক্ষেত্রে আমাদেরকে ইউজিসির আয়-ব্যয় দেখাতে হবে। কিউআর কোড সম্বলিত খাতা ও ইমপ্রুভমেন্ট সিস্টেমের বিষয় একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আরএস