ফোনকলে উপাচার্যের সাথে অছাত্রসুলভ আচরণ, শিক্ষার্থী বহিষ্কার

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম

সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরকে ফোন করে  অছাত্রসুলভ, অশ্রাব্য, অভব্য, উদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় কথা বলার অভিযোগে লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও কেনো স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবেনা তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

৩০ জুলাই (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা.) প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান  স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয় ।এছাড়া এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত করতে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ছে।বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনকালে উপাচার্যের বিনা অনুমতিতে ফোনালাপ রেকর্ড  এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া দেশের প্রচলিত আইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নিয়ম-কানুন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ঐ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা লিখিতভাবে জানানোর জন্যও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য,  গত ১৮ জুন ঈদের ছুটিতে হল খোলা রাখার দাবিতে হল প্রভোস্টের কাছে সমাধান না পেয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দাবি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের কাছে। প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যকে না পেয়ে  উপাচার্যের  মোবাইলে ফোন কল দিয়ে হলের ছুটি কমাতে অনুরোধ জানাতে থাকেন অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের সাথে তর্কাতর্কি শুরু করে, উপাচার্যও পালটা জবাব দিতে থাকেন। উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের কথোপকথনের ৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ডর একটি কল রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি প্রচার করে, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফোনকলটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ফোন থেকে যাওয়ার কারণেই শৃঙ্খলা কমিটির সভায়  সেই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে  বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, বিনা অনুমতিতে কোন ব্যক্তির সাথে ফোনালাপ রেকর্ড করা ও সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া, অশ্রাব্য ও মানহানিকর কথা বলা অপরাধের শামিল। শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ৭ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি থাকতেই পারে। তবে সেগুলো অবশ্যই নিয়মের মধ্যে থেকে সমাধান করতে হবে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজের সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাখ্যা পেলে তদন্ত কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কি করবে না করবে সে ব্যাপারে কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে। আমার যে সুপারিশ আমি সেটা করবো।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।

আরএস