ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ১৬ দফা দাবিতে কর্মকর্তাদের টানা কর্মবিরতিতে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থবির করে রাখার পর অবশেষে কর্মবিরতি স্থগিত করেছে কর্মকর্তা সমিতি। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম।
এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা সমিতির `ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি`র ব্যানারে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলো তারা। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত টানা কর্মবিরতিটি চলমান ছিলো।
চাকরীর বয়সসীমা বৃদ্ধি, পোষ্যকোটায় সন্তানদের ভর্তি শর্ত শিথিল, কর্মরত অবস্থায় কর্মচারীদের মৃত্যু হলে ৯০ দিনের মধ্যে পরিবারের যোগ্যতম সদস্যকে চাকরীতে বহাল সহ একাধিক দাবিতে চলমান কর্মবিরতিটি শুরু হয়েছিলো ২৬ জুলাই থেকে। শুরুতে কোটায় ভর্তি শিথিল ও চাকরীর বয়সসীমা বাড়াতে আন্দোলনটি শুরু হলেও ২৮ আগস্ট উপাচার্যের কাছে ১৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। পরে ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিটি পালন করছিলেন কর্মকর্তারা।
জানা যায়, প্রথম দিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম চলমান থাকলেও পরবর্তীতে সমিতি থেকে কর্মকর্তাদের বাঁধা দেয়া হচ্ছিল। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে কর্মবিরতির সময় প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তাদের দ্বারস্ত হলে কাজ না করতে চাওয়া কিংবা পরে আসতে বলা হচ্ছে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা যায়।
কর্মকর্তাদের দাবি মেনে নেয়ার আন্দোলনে এবং তাদের কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছিল সাধারণ সেবা প্রার্থী শিক্ষার্থীদের। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা চলমান থাকা অবস্থায় বারংবার প্রশাসন ভবনে গিয়ে নির্দিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের না পাওয়া সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই না বলছেন অনেক শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, কর্মবিরতি চলাকালীন দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার একাধিক কক্ষে ফ্যান ও লাইট চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। একাডেমিক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার বেশীরভাগ কক্ষেই একের অধিক কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও তা লক্ষ্য করা যায়নি।
ইবি শাখা ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিরুল কবির বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি আদায়ের নামে কর্মবিরতি এটা শিক্ষার্থীদের জন্য হয়রানি। আমরা তাদের দাবি গুলো দেখেছি সেখানে বেশ কিছু দাবি আমাদের কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে। শিক্ষা সবার অধিকার, তাই বলে যোগ্যতা অর্জন না করেই সেটা চাওয়া এটা অনধিকার।
অন্যদিকে আন্দোলনের প্রক্রিয়া নিয়ে কর্মকর্তা সমিতির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের মধ্যেও ছিলো বিভক্তি। সাবেক নেতারা দাবিতে একমত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থবির করে রাখাটাকে বেমানান বলেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে এস্টেট শাখার প্রধান ও কর্মকর্তা সমিতির সাবেক নেতা সামসুল ইসলাম জোহা বলেন, আমরাও এই দাবিগুলোর পক্ষে তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থবির করে নয়। নিয়মিত প্রশাসনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দাবি গুলো পেশ করা উচিত। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কর্মকর্তাদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত তবে আন্দোলনের প্রকৃতির সাথে একমত নই। আমরা তাদের বলেছি আপনাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের সাথে কথা বলতে পারি। সেক্ষেত্রে আপনাদের অফিসের কার্যক্রমে ফিরে আসা উচিত। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় কর্মকর্তাদের এমন কোনো কাজে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থন করবে না।
তবে আন্দোলন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম। তিনি বলেন, আন্দোলন স্থগিত রয়েছে তবে তা প্রত্যাহার করা হয়নি। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং শিক্ষক নেতাদের উপস্থিতিতে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তারা বলেছেন আইনগতভাবে বৈধ সকল দাবি মেনে নেয়া হবে। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমরা কর্মবিরতি স্থগিত করেছি।
দীর্ঘ দিনের কর্মবিরতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কর্মকর্তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেছি। শিক্ষার্থী ও জরুরীবিভাগের সকল কার্যক্রম কর্মবিরতির আওতার বাইরেই ছিলো। শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম এই বিরতির আওতায় ছিলো।
আন্দোলনের দোহাই দিয়ে এতোদিন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মকর্তাদের না থাকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল আলম বলেন, তারা কোনোদিনো থাকেনি আজকেও নেই। সেটা কর্মবিরতির জন্য না। তবে একাডেমিক শাখায় এসে কোনো শিক্ষার্থীকে ফিরে যেতে হয়নি। পরীক্ষা শাখায় সার্টিফিকেট লেখার লোকের সংকট রয়েছে৷ আমরা ইতোমধ্যে ভিসি মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি দিয়ে বিষয়টি বলেছি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কর্মকর্তাদের দাবির বিরুদ্ধে আমরা নই। তাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয় অবশ্যই প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দাবি আদায় করবে। কিন্তু তা ছাত্রদের জিম্মি করে, প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নয়। আমি মনে করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটা কখনোই মানবেনা। আর শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টই ছাত্রলীগের সেন্টিমেন্ট।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তাদের ন্যায্য দাবি গুলোতো আমরা মেনে নিবোই। কিন্তু মাসের পর মাস প্রশাসনিক কাজ বন্ধ করে রাখা অনৈতিক কাজ। দাবি আদায়, এটাতো শক্তির জায়গা নয় যুক্তির জায়গা। তারাও আমাদের পরিবারের লোক৷ এখানে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। তবে আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। যা আইনগত ভাবে সম্ভব আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। এখানে অর্থের ব্যাপার রয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, যে সকল বিষয় সরকার বা ইউজিসির হাতে রয়েছে সেগুলো তাদের নিশ্চয়তা ছাড়া পূরণ করা সম্ভব না। এসকল দাবি বাস্তবায়নে আমরা কর্মকর্তাদের সাথে থাকতে পারি।
আরএস