কুষ্টিয়ায় উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে শিক্ষাবিদদের অসন্তোষ

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম

কুষ্টিয়ায় চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাশের হারে সংখ্যাগত সন্তুষ্টি থাকলেও কাঙ্খিত মানসম্মত ফলাফলে ঘটেছে ব্যাপক বিপর্যয়। তবে এ বছরের ফলাফলভিত্তিক সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুষ্টিয়া আবারও শীর্ষস্থানে নিজ অবস্থানকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

কুষ্টিয়া শহর কেন্দ্রিক প্রথম সারির ১০টি কলেজে গড় পাশের হারে সংখ্যাগত অবস্থান অধিক হলেও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কাঙ্খিত যে স্কোর বা গ্রেড পয়েন্ট প্রয়োজন সেক্ষেত্রে শতকরা হারে রয়েছে দৈন্যতার তলানীতে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগের তথ্যমতে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা-২০২৩ এ জেলার ৬৯টি কলেজ থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে মোট ১৪ হাজার ৭৬জন পরীক্ষার্থী ২২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। এসব পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ হাজার ৬৪৫ জন ছাত্র এবং ৭ হাজার ৩৩১জন ছিলো ছাত্রী।

২৬ নভেম্বর প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় উত্তীর্ণ বা পাস করা শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা ৯ হাজার ৭০জন যার মধ্যে ৩ হাজার ৮৭০ জন ছাত্র এবং ৫ হাজার ২০০ জন ছাত্রী। জেলায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড় পাশের হার ৬৪ দশমিক ৪৪ ভাগ। যেখানে সংশ্লিষ্ট যশোর শিক্ষাবোর্ডে চলিতি বছর গড় পাশের হার ছিলো ৬৯ দশমিক ৮৮ ভাগ এবং এ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২৩ এ সর্বোচ্চ পাশের হারে শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলা পাশের হার ৮০ দশমিক শুন্য ৪ ভাগ।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা-২০২৩ এর ফলাফলে জেলার শীর্ষ বা প্রথম সারির ৫টি কলেজ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান- ৪৬৯, মানবিক-২৮৪ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৯৯ সহ পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫২জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১ হাজার ১১৩জন এবং বাকী ৩৯জন অকৃতকার্য হয়েছে। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫২৭জন। যার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত সংখ্যা ৩৭৬, মানবিক থেকে ১০৬ এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৪৫।

সরকারি মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৪০, মানবিক ৩২৪ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২৭৮ জনসহ মোট ৯৪২জন। এখানে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৯৬ জন। গড় পাশের হার প্রায় ৯৫ শতাংশ হলেও জিপিএ ৫ প্রাপ্তের সংখ্যা যথাক্রমে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৯, মানবিকে ৩৯ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২জনসহ মোট জিপিএ প্রাপ্তের সংখ্যা ১১০জন।

জেলার বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের দৈন্যতা বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক লাল মোহাম্মদ বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বিজ্ঞান শিক্ষার্থী হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায় হতে যে মানদণ্ডের শিক্ষাটা অর্জন করে আসার কথা সেখানে শিক্ষার্থীদের মানদণ্ডটা একেবারে তলানীতে। যে কারণে সিলেবাস ও কারিকুলাম অনুসরণ করতে গিয়ে কলেজের বিজ্ঞান শিক্ষকরা যেখান থেকে পাঠাদান শুরু করছেন সেই মানদণ্ড থেকে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহন করতে না পারায় শ্রেণিকক্ষের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ছুটছে কোচিং সেন্টারে। এতে শিক্ষার্থীরা না জেনেই বা না বুঝেই তাদের বিজ্ঞান শিক্ষার ১২টা বাজিয়ে ছাড়ছে।’

কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক অভিমত দেন, ‘প্রাতষ্ঠানিক শিক্ষার গোড়াপত্তনটা মজবুতিকরণের কোন বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান করতে। অথচ শিক্ষার্থীরা কলেজে শ্রেণিকক্ষের পাঠ গ্রহন না করে ছুটছে কোচিং সেন্টারে। বিপর্যয়টা ঘটছে এখানে। যেখানে দেশসেরা উচ্চ শিক্ষিতরা একটা মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে কলেজ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। শ্রেনীকক্ষে পাঠদান বিষয়ে রীতিমতো নানা প্রশিক্ষণ ও কোর্স সম্মন্ন করে প্রত্যেক শিক্ষকই সঠিক পাঠদানে সক্ষমতা অর্জন করেন। অথচ এসব শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন করে কার্যত: নিজেদের মানসম্মত শিক্ষাকেই বর্জন করে চলেছে শিক্ষার্থীরা। এর উত্তোরণে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারসহ সঠিক ও সমন্বিত উদ্যোগটা নেয়া এখন সময়ের দাবি হয়ে গেছে।

এআরএস