উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব হলেই গড়ে উঠবে আগামীর সুন্দর পৃথিবী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম

প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব হলেই আগামীর সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগামীর সমস্ত পথ চলা সুন্দর, সৃজনশীলতায়, প্রকৃতি সুরক্ষায়, কাব্যে এবং সংস্কৃতিতে হোক। প্রকৃতিকে আঘাত করার জায়গা থেকে আমরা যেন বের হয়ে আসতে পারি। নতুন সমাজ ব্যবস্থার জন্য আমাদের যে আকাক্সক্ষা সেই সমাজে প্রকৃতি এবং মানুষের অপার বন্ধুত্ব নিশ্চিত হলেই সুন্দরতম, শ্রেষ্ঠতম পৃথিবীকে সবাই মিলে অবগাহন করতে পারব।’

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজের নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাব আয়োজিত ‘১৪তম জাতীয়  নেচার সামিট ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।  

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘মানুষ পৃথিবীতে একটি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। একটি কর্তৃত্ব আরোপ করেছে। যার ওপরে টিকে থাকা সেই প্রকৃতির ওপরে। মানুষ মূলত প্রকৃতির সকল সুবিধা নিয়ে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। প্রকৃতি উজার করে মানুষকে এই শ্রেষ্ঠত্ব তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। যিনি পৃথিবীতে বড় বিজ্ঞানী হয়েছেন তিনি তার মস্তিস্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি নতুন কিছু করেনি প্রকৃতির নিয়মনীতিকে আরও সুন্দর, সুসংগঠিতভাবে উদ্ভাবন করা ছাড়া। অর্থাৎ পৃথিবীতে সেরা বিজ্ঞানীও প্রকৃতির এক ধরনের দান, যে কিনা প্রকৃতিকে বুঝে, প্রকৃতির নিয়মগুলো বুঝে সেরা বিজ্ঞানী হয়েছেন।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলি, আর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা বলি- নিশ্চয়ই মানুষের বুদ্ধিমত্ত্বার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় এখানে আছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কী প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার আরও নতুন কলাকৌশল ছাড়া অন্য কিছু? তাহলে আমার মনে হয় শুরু থেকে আজকের পোস্ট মডার্নিজম সোসাইটি পর্যন্ত পৃথিবীর এগিয়ে চলার প্রতিটি পদে পদে মূলত মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহার করেছে। কিন্তু প্রকৃতি তার শোধ মাঝে মাঝে নিতে চায়। কেননা আমরা মানুষেরা তার অতিব্যবহার, অপব্যবহার এবং তাকে বিনষ্ট করে তুলেছি। সেকারণে প্রকৃতি তা শোধের বার্তা নিয়ে মাঝে মাঝে রুখে দাঁড়ায়।’

তরুণদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমাদের চিন্তায়, সৌকর্যে, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে আগামীর পৃথিবী আরও সুন্দর হবে। মা, মাটি আর প্রকৃতিকে আলিঙ্গন আর ভালোবাসার মধ্যে নির্ভেজাল শুদ্ধতা থাকতে হয়। আমরা যদি প্রকৃতি সুরক্ষায় ব্যর্থ হই। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আরও বেশি গর্জে উঠবে। যদি সেটি হয় তাহলে আমাদের আগামীর সুন্দরতম পৃথিবী আরও ধ্বংসাত্বক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের যেন আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে ভীষণ বেমানান যুদ্ধাবস্থা আর দেখতে না হয়। সেটিই হোক আগামীর পৃথিবীর কাক্সিক্ষত লক্ষ্য। আমাদের নতুন প্রজন্ম সুন্দর এবং শান্তিময় বিশ্বে বেড়ে উঠুক এই প্রত্যাশা।’

নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও পিএসসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাবের মডারেটর সহকারী অধ্যাপক বিপ্লব কুমার দেব। দুইদিনব্যাপী (৮ ও ৯ ডিসেম্বর ২০২৩) প্রকৃতি ও প্রতিবেশবিষয়ক সম্মেলন ন্যাশনাল নেচার সামিটের ১৪তম সংস্করণের আজ ছিল শেষ দিন। পাইওনিয়ার্স (নার্সারি-দ্বিতীয় শ্রেণি), এক্সপ্রোরার্স (তৃতীয়-পঞ্চম  শ্রেণি), ভিশনারিজ (ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি), চ্যালেঞ্জার্স (নবম-দশম শ্রেণি) এবং ইনোভেটরস (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) ও স্কলার্স (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়)- এই ছয়টি পৃথক ক্যাটাগরিতে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। গত ১ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এ আয়োজন হয়। ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ের আয়োজন হয়। সব বিজয়ী ৯ ডিসেম্বর জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে এ অধিবেশনে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আরএস