অভিবাসন দিবস বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন বাঙলা কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ০৯:১৮ পিএম

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিআইপি সম্মাননা দেয়া হবে কেউ যাতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে না যায়- ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত “কেবল আইন দিয়ে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়” শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি বাঙলা কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকার এফডিসিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ  অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি বাঙলা কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ট বক্তার হওয়ার গৌরব অর্জন করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিক প্রিয়া দেব। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) ও সিম্স প্রকল্প, হেলভেটাস বাংলাদেশ।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ব্যবস্থাপনায় এই প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের দেশের সেরা ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ট্রফি, সনদপত্র ও পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে ১ লখ ও ৭৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়। শ্রেষ্ঠবক্তাকে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এসময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যাতে নৈতিকভাবে কর্মী প্রেরণ করতে পারে এজন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অচিরেই রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিআইপি সম্মাননা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে তাদের মান অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা জরুরী। যাতে যোগ্য এজেন্সিগুলোকে পুরস্কৃত করা সহজ হয়। ভিসা ট্রেডিং বন্ধসহ দক্ষ কর্মী প্রেরণ করতে পারলে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রেখে নিরপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিসহ অন্যান্য সহযোগী সরকারি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে আমাদের দেশের একটা শিক্ষিত অংশ জেনে বুঝে অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে চায়। তারা যাতে যেনতেন ভাবে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ না যায় সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী। আমাদের কিছু কিছু কর্মী বৈধভাবে রোমানিয়া ও পোল্যান্ড গিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার বিবেচনায় বাংলাদেশে কয়েকটি দেশের দূতাবাস চালু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্পৃক্তকরণে সরকার নীতি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অভিবাসী কমীর্রা আমাদের সোনার সন্তান। পরিবার পরিজন, আত্মীয়—স্বজন ফেলে বিদেশে অবস্থান করে শ্রমে ঘামে উপার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করছে। যা আমাদের অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো কাজ করছে। অন্যদিকে এদেশের এক শ্রেণির অর্থখেকো মানুষ দেশের টাকা লুঠ করে বিদেশে পাচারের মাধ্যমে বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ গড়ে তুলছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোঁকলা বানিয়ে আয়েশি জীবন যাপন করছে। অথচ আমাদের প্রবাসী কমীর্রা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করছে। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে  প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর দায় চাপালেই চলবে না। যারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে তাদেরকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে জেনে শুনে বুঝে বিদেশে যাওয়া উচিৎ। কর্মস্থলে গিয়ে নিয়োগকর্তার ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করা ঠিক নয়। 

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের অনেক কমীর্রা ভালো বেতনে স্বল্প খরচে বিদেশে গিয়েও কর্মস্থল থেকে পালিয়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ভূমধ্য সাগর দিয়ে জাহাজে করে ইউরোপ, ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। কমীর্র এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দায় পড়ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উপর। যারা বৈধভাবে টুরিস্ট, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বডি কন্টাক্টের মাধ্যমে মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়ছে, তা ঠেকাতে না পারলে দেশের বদনাম বাড়তে থাকবে। এমনকি অবৈধভাবে কমীর্ যওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকলে লেবার রিসিভিং কান্ট্রিগুলো আমাদের কাছ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, সরকার ঘোষিত রেমিট্যান্সের উপর যে প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ প্রদান করা হচ্ছে তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা এবং শুধুমাত্র যারা নিম্ন আয়ের প্রবাসী কর্মী বিএমইটি ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের উপর ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। যেসকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে বিদেশে কর্মী প্রেরণ করছে সেই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে পোশাক শিল্প মালিকদের মতো আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করছি। বাংলাদেশ থেকে পোশাক, চামড়া, পাটজাত পণ্যসহ বেশিরভাগ রপ্তানি আয়ের উপর সরকার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করছে। তাহলে কেন একজন রিক্রুটিং এজেন্সি কমীর্ প্রেরণ করে বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনে মুখ্য ভুমিকা পালন করলেও তাকে কেন প্রেরিত কমীর্র ওপর প্রণোদনা প্রদান করা হবে না ? সিআইপির মর্যাদা দেয়া হবে না ? সরকারের স্টিমুলাস প্যাকেজের মধ্যে কেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যুক্ত হতে পারবে না ? কেন স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না ? কেন সরকারি ভাবে ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণে স্বল্পমূল্যে জমি পাবে না ?  তাই অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে রিক্রুটিং এজেন্সি তথা বায়রাকে শক্তিশালি করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সেলিম মালিক, ডক্টর মুহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী ও সাংবাদিক আরাফাত আরা। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার ও বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।