নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে ইবিতে অস্থিরতা

ইবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে উপাচার্য কার্যালয়ে শিক্ষক কর্মকর্তা দুপক্ষের বাগবিতণ্ডায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি ) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড বসার কথা ছিলো। তবে বিগত সময়ে নিয়োগকে কেন্দ্র করে  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ রেজিস্ট্রার এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের একাধিক অডিও ভাইরালসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব অভিযোগের কারণে নিয়োগ স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে শিক্ষকদের একাংশ ও কর্মকর্তারা।

পরে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা নিয়োগ বোর্ড চালু রাখার দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি নিয়ে যাওয়া শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় শিক্ষকরা উপাচার্যের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবিতে যাওয়া শিক্ষকরা উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন। অন্যদিকে কর্মকর্তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নিয়োগ দেওয়া যাবে না, বিভাগের প্লানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, ইতোমধ্যে প্রচারিত সকল দুর্নীতির তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হবে।

এদিকে শিক্ষক কর্মকর্তার একাংশ ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানালেও পরবর্তীতে বিকেল ৩টায় উপাচার্যের বাসভবনে এ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১২ জন চাকরিপ্রার্থীকে ঢুকতে দেখা যায়। জানা যায়, লিখিত পরিক্ষা শেষে ৭জন উত্তীর্ণ হয়।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ যারা ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা যদি যোগ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়, প্রশাসনের যদি মনে হয় যে তারা যোগ্য তবে তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতে চায়। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত কোন বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না।

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট  বলেন, নানা সময়ে উপাচার্যের নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে যেগুলোর এখনও কোন সমাধান হয়নি। এরপরও তিনি পুনরায় নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। আমরা এই দুর্নীতির নিয়োগ কোন ভাবেই মানবো না। এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সমাবেশ চলমান থাকবে।  

ঘটনাস্থলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, এই মুহূর্তে দেখলাম নিচে মাইক বাঁধিয়ে এক ধরনের বক্তব্য, কর্মকাণ্ড হয়েছে। এক পর্যায়ে ওখান থেকে একটা টিম ভিসি অফিসে দাবি নিয়ে আসছে। বিষয়টা হচ্ছে মানুষের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চাই যে কেউ অফিসে ঢুকার আগে পিএস‍‍`র সাথে কথা বলে বা অনুমতি নিয়ে ঢুকুক। কিন্তু পর্যায়ক্রমে না ঢুকে প্রথমে কর্মচারী-কর্মকর্তা, এরই মাঝে আদর্শিক শিক্ষক গ্রুপ, পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢুকে পড়েছে। আমি জানি না পিএস‍‍`র সাথে অনুমতি নিয়েছে কিনা। একটু ডেকোরামের মাধ্যমে একটা গ্রুপ শেষ হলে অন্য গ্রুপ আসবে এভাবে তো শৃঙ্খলা থাকে। আমার প্রথম পরিচয় শিক্ষক, দ্বিতীয়ত আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সবার প্রতি এটাই অনুরোধ থাকবে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ইমামের মতো একটি পদ নিয়ে এমন হয়েছে, এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমি নিজেই এখানে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী ছিলাম। আমি দেখেছি, এখানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। তারা আমাদের এখানে উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষকদের সম্মানহানি করেছে।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, যেহেতু নিয়োগ নিয়ে একটি বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে তাই আমরা বলেছিলাম যে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিয়োগে যাবেন না। আর যদি নিয়োগে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগের মত ভাল একটি কাজ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই সামান্য কথাটি আমরা বলা শেষ করতে পারেনি কিন্তু অনেক সন্তান সমতুল্য শিক্ষার্থী, অছাত্র বা বহিরাগতদের আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন পদ পদবীতে থাকলেও নিয়ম মেনে সেখানে যাই, কিন্তু এরকম একটা মিছিল কিভাবে সেখানে প্রবেশ করল, কারা নেতৃত্বে ছিল, কারা তাদের সাপোর্ট দিয়েছে, তা বের করার প্রয়োজন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা আজকের এই কাল্পনিক ঘটনা ঘটিয়েছে আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিৎ যারা জাতীয় প্রোগ্রামে তছনছ, কম্পিউটার এইসব বিষয় নিয়ে আপনারা তোহ জানেন এসবের তদন্ত হওয়া উচিৎ।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমি কোনো ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনোই জড়িত নই। অডিও ফাঁসের প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, এসব বানোয়াট কারা কোন উদ্দেশ্য এসব করেছে আমি জানিনা। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  

আরএস