ইসলামী বিশ্বেবিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসানকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডে সদস্যদের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণ’ করার অভিযোগে তাকে এই পদাবনতি দেওয়া হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২৬২ তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট তীব্র ক্ষোভ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অনুষ্ঠিত প্রভাষক পদে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা চলাকালে বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের সাথে ড. বখতিয়ার হাসান (বিভাগের তৎকালীন সভাপতি) অশোভন আচরণ করেন। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ সদস্যের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অভিযোগের সত্যতা পায় এবং সে মর্মে রিপোর্ট প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ২৬২তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। সিন্ডিকেট সভা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে Islamic University employees efficiency and discipline rules এর ৩ (সি) ধারায় সংশ্লিষ্ট ৯ এর-৪ ধারার উপধারা (ফ) অনুযায়ী সিন্ডিকেট তার বর্তমান পদ (সহযোগী অধ্যাপক) অবনমন করে প্রভাষক পদে প্রারম্ভিক বেতন (২২০০০-৫৩০৬০ টাকা) নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এ বিষয়ে ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আমার সাথে এটা অন্যায় করা হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী হয়নি। কেউ চোখ বন্ধ করে দেখলেও বুঝতে পারবে। বিষয়টি হাইকোর্টে মামলাধীন রয়েছে। একটি স্থগিতাদেশও আছে। তাছাড়া নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়ে আমার দ্বিমত পোষণ করার অধিকার রয়েছে। তারা অশোভন আচরণ বললেও তার ব্যাখা দিতে পারেনি।
এদিকে ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট। সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে এ তথ্য জানা গেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেকোন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য কিংবা মতভিন্নতা থাকতেই পারে। যে ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের একজন সম্মানিত সদস্যকে শান্তি প্রদান করেছে সেটি আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং ব্যক্তি প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। অনতিবিলম্বে এধরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
উক্ত ঘটনায় আরোপিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ টি বিভাগের সভাপতিবৃন্দ।
এতে বলা হয়, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত ২৫/০৯/২০২২ তারিখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বিভাগের সভাপতির সাথে নিয়োগ বোর্ডের অন্য সদস্যদের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তাঁকে পদ অবনমন করা হয়েছে। আমরা মনে করি যেকোন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য কিংবা মতভিন্নতা থাকতেই পারে এবং অতীতে এধরনের ঘটনার অসংখ্য নজির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।
এতে আরও বলা হয়, নিয়োগ বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের আইনগত অধিকার থাকা সত্ত্বেও সেটিকে অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভবিষ্যতে বিভাগের সভাপতি হিসেবে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা দূরুহ হয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এধরনের নজির স্থাপন ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবেনা প্রকারান্তে এটি ব্যক্তি প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে-মর্মে আমরা মনে করি। আমরা অনতিবিলম্বে ড মো. বখতিরার হাসানের বিরুদ্ধে আরোপিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাচ্ছি অন্যথায় এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকাণ্ডের উপর সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, পুরো সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নিয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
এই্চআর