৬৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার করল ঢাবি ও অধিভুক্ত কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর অধিভুক্ত কলেজসমূহের ৬০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে চাঁদাবাজি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে এবং ফেসবুকে গালিগালাজ করায় আরেক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এক বছরের জন্য।

এদিকে ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকান বসিয়ে চাঁদা নেওয়ায় প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ছয়জনকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার (০৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এক সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের মিটিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- মৃৎশিল্প বিভাগের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. রিয়াদ মাল এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মো. আব্দুল ওহেদ।

জানা যায়, মৃৎশিল্প বিভাগের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে আটক রেখে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।

এ ঘটনায় ভিকটিম শিক্ষার্থীর পিতা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নামে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে এই সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সাময়িক বহিষ্কৃত ফলিত গণিত বিভাগের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো, রিয়াদ মাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে ঘুরতে আসা দুজন দর্শনার্থীর গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি মারধর করে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এ ঘটনায় ভিকটিম শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত এই চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

গালিগালাজ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী আব্দুল ওহেদ এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে নির্মাণাধীন শতবার্ষিক মনুমেন্ট নিয়ে এক ভিডিও আপলোড করেন। সেখানে অশ্রাব্য ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমকর্মীদের গালিগালাজ করায় তাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ সময়ে তাকে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে নিয়মিত কাউন্সেলিং নিতে হবে এবং তার মানসিক মূল্যায়ন বিবেচনায় শাস্তি কমানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত ৬০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই জনকে পরীক্ষাসহ তিন সেমিস্টার, ৪০জনকে পরীক্ষাসহ দুই সেমিস্টার এবং ১৮ জনকে পরীক্ষাসহ ১ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া, ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রক্টর অফিসের মো. শামীম হোসেনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর বাইরে, শামীম হোসেনের সহযোগী কিষান চন্দ্র দাস, অমিত সরকার, শ্রী শুদর্শন হালদার, মো. মাসুম শেখ, মো. রফিক গাজী এবং মো. মিঠু মীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সহযোগিতার প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে শোকজ করা হবে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে আরেকটি তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সংশ্লিষ্ট থানা, শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবক এবং স্থায়ী ঠিকানায় প্রেরণ করা হবে। বহিষ্কৃত ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় হলে অবস্থান করতে পারবে না। তাদের কৃত অপরাধের জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানো এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ।

বিআরইউ