তিতুমীরের সানাউল্লাহর মুখে হাসি ফোটাবে কে?

আমিরুল ইসলাম সিয়াম, তিতুমীর কলেজ প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

সানাউল্লাহ মিয়া। বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। চার দশক কাটিয়েছেন তিতুমীর কলেজে। এখন জীবনের পড়ন্ত বেলা। বার্ধক্যের রোগ শরীরে জেঁকে বসেছে। রয়েছে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ইনফেকশন। কষ্টগাঁথা কথাগুলো বলতেও বেগ পেতে হচ্ছে তার। করুণ স্বরে সানাউল্লাহ বলছিলেন, ‘যে কয়দিন বেঁচে থাকি ওষুধের ওপর চলতে হবে। হঠাৎ এমন শ্বাসকষ্ট উঠে মনে হয় মরে যাবো। জিনিসপত্রের যে দাম, এক বেলা কোন রকম ডাল ভাত খাই। এমনিই পড়ে থেকে পইচা-পইচা মরে থাকবো হয়ত।

দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে তিতুমীর কলেজের নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ক্যাম্পাসের ফটক পার হতেই যার মৃদু হাসির ছোঁয়া পেয়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থীরা। আদর করে ভাতিজা ডেকেছেন অনেককেই। তাদের কেউ কেউ নাম-খ্যাতি কুড়িয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুন্দর জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় তার মুখে হাসি ফোঁটানোর মতো কেউ নেই। নিজেই নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। যতটুকু সহযোগিতা পেয়েছেন তার প্রায় সবই কলেজের শিক্ষকরা করেছেন। তবে তা অপ্রতুল।

সানাউল্লাহ বলেন, কলেজের শিক্ষকরা মাঝে মাঝে সাহায্য করে। এটা দিয়েই কোন রকম চলছে। গত কয়েকদিন আগে অসুস্থতার জন্য ৮০ থেকে ৮২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারা যদি না দিতো তাহলে আমি চলতে পারতাম না।

সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, মাসে কলেজ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন পান। তার ৭ হাজার টাকার বেশি ওষুধ কিনতে খরচ হয়। বাকি টাকা দিয়ে ডালভাত খেয়ে কোনোরকম দিন পার করেন।

বলেন, আমি কোন রকমে জীবনটা বাঁচাইতে আছি। কোন রকম ওষুধ-বড়ি খেয়ে বেঁচে আছি। এখান (চাকরি) থেকে সরে গেলে আমি ওষুধ বড়িও খেতে পারবো না। কোন রকমে বেঁচে আছি। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করাও কষ্টকর হয়ে পড়ছে জানান তিনি।

মনে কষ্ট নিয়ে সানাউল্লাহ জানান, তিতুমীর কলেজের সাবেক-বর্তমান কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সহযোগিতা পাননি। কলেজ থেকে শুধু বেতনটাই পান। সপ্তাহে কোন ছুটিও মেলে না তার।

তিনি বলেন, বছরে মাত্র ১০ দিন ছুটি আছে। আমি অনেক দিন ধরে অসুস্থ। আগের শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নিতো। বর্তমানের নেতাদের কাছে আবদার করে কোন ফায়দা হয় নাই। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে নেতাদের কাছে বহুত ঘুরাঘুরি করছি কোন নেতা আমাকে ১০ টাকা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে নাই।

সানাউল্লাহর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসামে। তিনি ১৪ বছর বয়সে তার চাচার মাধ্যমে প্রথম বনানী হলে ৫০ টাকা বেতনে টেবিল বয়ের চাকরি পান। হলে বাবুর্চির সহকারীসহ নানাভাবে প্রায় ২ যুগ কেটে যায় সেখানে। সেই থেকে তিতুমীর কলেজ সংশ্লিষ্ট নানা জায়গায় কাজ করে বর্তমানে ক্যাম্পাসের প্রহরী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সানাউল্লাহর সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম জানান, তিনি গত দুই মাস ধরে একেবারেই কাজ করতে পারছে না। এরমধ্যে এক মাসেরও বেশি সময় হসপিটালে ছিল। বর্তমানে অধ্যক্ষ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। ছুটির মেয়াদ রমজান মাস পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ অক্সিজেনসহ কিছু জিনিস কিনে দিয়েছে। শ্বাসকষ্ট, কাশি সেই সাথে ফুসফুসের সমস্যা একটু বেশি অনুভব করছেন তিনি। তার জন্য প্রতিনিয়ত ওষুধ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওষুধের যে দাম।

তিনি আরও বলেন, আমার ৬ সন্তানের মধ্যে ছেলে একজন। সে (ছেলে) তিতুমীর কলেজে ৮ হাজার টাকা বেতনে পিওনের চাকরি করছে। খুবই কষ্টে দিন কাটছে, প্রতিনিয়ত হাওলাত করে প্রায় লাখ টাকার বেশি ঋণ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে কীভাবে পরিবার চালাবো সেটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম আমার সংবাদকে জানান, সানাউল্লাহ মিয়ার জন্য আমরা কলেজের স্বাস্থ্য তহবিল থেকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কলেজে অবস্থানকালে যখন যেটা সম্ভব হয় খাবার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইত্যাদি দিয়ে তার খোঁজ খবর নিয়ে থাকি। ওনার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রায়ই ছুটি দিয়েছি, এখনো ছুটিতে আছে। আমাদের শিক্ষকরা ওনার জন্য সবসময় আন্তরিক থেকে সহযোগিতা করছে।

এসময় তিনি সানাউল্লাহ মিয়ার সুস্থতা কামনা করেন। সেই সাথে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইএইচ