তীব্র তাপদাহে রাবির ক্লাসে নাস্তানাবুদ শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৮:৩৭ পিএম

তীব্র তাপদাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ক্লাস চালু রয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনকে দিন বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। যেকোনো মুহূর্তে তাপমাত্রা ছাড়াতে পারে ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তীব্র গরমে বাতাসে বয়ে আসছে গরমের হুল্কা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আবাসিক হলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং।

অন্যদিকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। এমন পরিস্থিতিতে সশরীরে ক্লাস করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তীব্র গরমে ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্বিদ্যালয়গুলো সশরীরে ক্লাস স্থগিত করে  অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তুলনামূলক অধিক তাপমাত্রার অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও গত ২৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সশরীরে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘চলমান তাপদাহের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের এতদসংক্রান্ত নানাবিধ অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিসমূহ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তবে বিভাগগুলো প্রয়োজনবোধে অনলাইনে ক্লাস নিতে পারবে।’ যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু হয়নি।

এদিকে তীব্র তাপদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অধিকাংশ সময়ই টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। এমন সমস্যাকে ‘সাময়িক’ উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা কামনা করছি।’ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় তাপসী রাবেয়া হলেও একই সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আমরা সাময়িকভাবে এই বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছি। আগে এই সময়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া বিশ^বিদ্যালয় ছুটি থাকতো। কিন্তু এবার সেই ছুটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিটা থাকলে নিঃসন্দেহে সেটি অনেক ভালো হতো। আর পানি সংকট যদি আরও তীব্র হয় তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করবো।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৮টার মধ্যেই সূর্যের তীব্র কিরণে আবাসিক হলের ট্যাংকের পানি অনেক গরম হয়ে যায়। এরপর সারাদিন আর সেই ট্যাংকের পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এমনকি ক্লাস শেষে হলে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার জন্যও ঠাণ্ডা পানি পান না শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি হলে সাবমারসিবল পাম্প থাকলেও পানি অপচয় রোধে অধিকাংশ সময়েই তা বন্ধ রাখা হয়। পানি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকায় আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজও যথাযথভাবে করতে পারছেন না। এছাড়াও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। ক্লাসরুমে এসি না থাকায় তীব্র গরমে শিক্ষকের লেকচারে মনোযোগী হতে পারছেন না তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র গরমে প্রতিটি বিভাগেই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস চলছে। তবে অধিকাংশ ক্লাসরুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় শিক্ষকেরা ঠিকমতো পাঠদান করতে পারছেন না। অপরদিকে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসরুমে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। ফলে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

তীব্র গরমে ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শোভন। তিনি বলেন, রোদের মধ্যে ক্লাসে যাতায়াতের কারণে প্রচুর পিপাসা লাগতো। আর বোতলের পানি তো গরম হয়ে থাকে। তৃষ্ণা লাগলে এটাই খেয়েছি। এখন জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় একসাথে আক্রান্ত হয়েছি। ক্যাম্পাস খোলা রাখার উদ্দেশ্য হলো আমাদের পড়াশোনা। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। শুধু শুধু ক্যাম্পাস খোলা রেখে আমাদের কষ্ট করানো হচ্ছে, ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, এই তীব্র তাপদাহের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে পারছেন না। হলেও পানির লেয়ার নিচে নেমে গিয়ে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে পানিবাহিত রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যাম্পাস ছুটি দিয়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘এই প্রচণ্ড তাবদাহের কারণে শিক্ষকরাও সাফার করছে, শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সাফার করছে। আগামী কয়েকদিন যেহেতু তীব্র এই তাপপ্রবাহ চলামান থাকবে তাহলে অবশ্যই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ ছিলো ক্লাসগুলো অনলাইনে নেওয়া অথবা এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের ছুটি দেওয়া। প্রশাসন গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করলো, ঠিক আছে। কিন্তু আমরা এই গরমে বসে থাকবো এটা লজিক্যাল না। আমি ক্লাসে দেখছি যে আমার ছেলে-মেয়েরা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছেন না। এমনকি আমি নিজেও মনোযোগী হতে পারছি না। এছাড়া বারবার লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে ক্লাস নেওয়া যাবে কিভাবে?’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান বলেন, ‘তীব্র রোদে বের হওয়ায় সর্দি-জ্বর নিয়েই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। এই রোদে বাইরে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা নজরে আনবো। তবে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলো প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রশাসনের ওপরে ছেড়ে দিলে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।’

 

বিআরইউ