রাবিতে হিন্দু শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি ছাত্রলীগ নেতার

রাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সবুজ বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জন ছাত্রলীগ কর্মী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

গত বুধবার রাতে তিনি ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন। তিনি বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।

অভিযোগে ভুক্তভোগী সবুজ বিশ্বাস অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও তার ৮-১০ জন অনুসারী আমাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে নিজেকে সনাতন ধর্মের দাবি করলে আরও বেশি মারপিট করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে হল ত্যাগ করি। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস বলেন, মারামারি সময় আমি হলেও ছিলাম না। মারামারির পরের দিন আমি হলে আসি। আমি রাজনীতির সাথে জড়িত না। আমি যে ব্লকে থাকি সেই ব্লকে নিয়াজ মোর্শেদ ভাইয়ের ছেলেরা থাকতো। পরে গত বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও তার ৮-১০ জন অনুসারী আমাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। পরে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয় আমাকে। পরবর্তীতে নিজেকে সনাতনী দাবি করলে আরও বেশি মারপিট করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে হল ত্যাগ করি। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে অবস্থান করছি।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও হলে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এক বড় ভাই আমাকে এই হলে তুলেছে। আমি রাজনীতি সাথে জড়িত না। তবে কোন বড় ভাই হলে তুলেছে তা জানাতে রাজি হননি এই ভুক্তভোগী।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের অপকর্ম লুকানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। আমি তাকে চিনি না। আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতিতে থেকে পদত্যাগ করবো।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের যে ঘটনা সেটি আমি জানার সাথে সাথে উভয়পক্ষের সাথে কথা বলি। লিখিত অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি নয়। সবুজ ওই হলের আবাসিক কোনো শিক্ষার্থী নয়। আবাসিকতা ছাড়া হলে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে নাহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা অভিযোগপত্র পেয়েছি। হল প্রশাসন থেকে দুপক্ষের সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ