ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

জাবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম

বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা পাঁচ মিনিটের জন্য ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে বলে দাবি করে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের যে আন্দোলন এটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। আমাদের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণাপত্র আছে সেখানে তিনটি মূলনীতি উল্লেখ আছে সাম্য, সামাজিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। কোটা পদ্ধতি আমাদের এই তিনটি মূলনীতির বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের এই তিনটি মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল সিয়াম বলেন, কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে যারা দিনের পর দিন পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। অতি দ্রুত আমরা একটি সংগঠন দাড় করাবো।

ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আই আই টি) বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার, তার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন স্মার্ট জনবলের। সেখানে আপনি কোটা দিয়ে স্মার্ট মানুষ, জনবল নিয়ে আসতে পারবেন না। আপনি ৫৬ শতাংশ মানুষকে কোটা দিয়ে যদি পঙ্গু করে দেন, তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ আপনি করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের যে সম্মান তা সবসময়ই থাকবে। কিন্তু তাদেরকে যদি এমন অযৌক্তিক জায়গায় জড়িয়ে ফেলেন তাহলে মানুষের যে সম্মান আছে তাদের প্রতি সেটা থাকবে না।

চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সাম্য ও  মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার সেটার বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই সমাজে কোন ধরনের বৈষম্য চাই না। যেহেতু কোটা একধরনের বৈষম্য  সেহেতু সেই কোটা যেন না থাকে  সেটাই আমরা চাচ্ছি। যদি কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকে তাহলে আমরা ধরেই নেব সরকার হয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ। আমরা চাই, সরকার এধরণের কোন পদক্ষেপ নিবে না, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই থাকবে এবং তারা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করবে।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা অচিরেই একটি প্লাটফর্মের আওতায় আন্দোলন পরিচালনা করবে বলে ঘোষণা দেয়। তারা জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে আলোচনার ভিত্তিতে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ত্রয়োদশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৫% কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশির ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের একদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করে। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। 

এর আগে, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে আরও ৯০ কার্যদিবস সময় পায় কমিটি। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোটা সংস্কার বা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন। 

কমিটির প্রতিবেদন ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না। সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে কোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন দেখা দিলে বা কোটার অপরিহার্যতা দেখা দিলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি আরও বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে যে ব্যবস্থা আছে তা বহাল আছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০% কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০%, প্রতিবন্ধী ১%, নারী ১০%, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য ১০%, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫% মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি চালু ছিল।

বিআরইউ